সারাদেশ

আইটিবি বার্লিনে ‘বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন’ উদ্বোধন করলেন পর্যটনমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেটে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা নারীদের রক্ষা হচ্ছে না গোপনীয়তা। সিসি ক্যামেরা ধারণ করা হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের ফুটেজ। যা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের কক্ষে বসে দেখতে পারেন মনিটরে। পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। ফলে জরুরি বিভাগের কক্ষেও স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এতে নারীসহ অন্যান্য রোগীদের রক্ষা হচ্ছে না গোপনীয়তা।

শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসকের কাজ করেন এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (ওয়ার্ড বয়)। ইনজেকশন থেকে শুরু করে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার কাজ করে থাকেন তিনি। এতে করে চিকিৎসা নিতে এসে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ফিরতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।

এমন চিত্র দেখা যায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কাদিপুরস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হলেন ডা. দিলোয়ার হোসেন (সুমন)। তার কক্ষে বসেই একটি মনিটরে দেখা যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পুরো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। সেই মনিটরে জরুরি বিভাগের সেবাগ্রহীতাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে। যেখানে তাকালেই দেখা যাবে সবকিছুই।

নারীসহ কারো গোপনীয়তার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না বলে দাবি করেন এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তার দাবি, রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যাতে জরুরি সেবা নিতে এসে কেউ যেন ফিরে যেতে না হয়।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (ওয়ার্ড বয়) হলেন সৌরভ। চার বছরে ধরে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ড বয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসকের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। তিনি ইনজেকশন থেকে শুরু করে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার কাজ করে থাকেন।

তবে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী জানালেন, দ্রুত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সম্প্রতি কয়েকদিন ছদ্মবেশে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকিট কাউন্টারের সামনে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। কাউন্টারের ভেতরে একজন ৫ টাকা ধরে টিকিট কাটেন। তার পাশে উপস্থিতি থাকে বহিরাগতের। সেবা নিতে আসা টিকিটপ্রত্যাশীরা লাইনে দাঁড়ানো থাকলেও কাউন্টারের ভেতরে থাকা দায়িত্বরতদের মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও গেমসের চিত্র যেন নিত্যদিনের ঘটনা। আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর টিকিট কাটলে পুরুষদের দেওয়া হয় ১০১ নং কক্ষে, আর মহিলাদের দেওয়া হয় ১০২ নং কক্ষে। কিন্তু জনবল সংকটের অজুহাত ও ডাক্তারদের অনুপস্থিতির জন্য বন্ধ থাকে ১০২ নং কক্ষটি। ফলে বাধ্য হয়েই পুরুষদের কক্ষেই মহিলারা সেবা নেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হেল্প ডেস্ক থাকলেও সেটি পড়ে আছে ময়লা ও ভুতুড়ে পরিবেশে। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক না থাকলেও বেশিরভাগ সময়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন ওয়ার্ড বয়। আর সেখানে কর্মরত নার্স ব্যস্ত থাকেন কম্পিউটারে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভ কমপ্লেক্সের ভবনের ভেতরেই রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি, ভিডিও ধারণ করেন। রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কক্ষের দরজা প্রায়ই থাকে তালাবদ্ধ। ইসিজির জন্য আলাদা কক্ষ থাকলেও তা করা হয় জরুরি বিভাগ থেকে। নারীদের জন্য মহিলা নার্স দিয়ে পর্দার আড়ালে ইসিজি করা হলেও ইসিজি করার বেডের ঠিক উপরে সচল রয়েছে সিসি ক্যামেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়াশরুমগুলোর অবস্থা খুবই নোংরা, বাল্ব নষ্ট, বেসিন আর কমোডের অবস্থা খুবই খারাপ। কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সংরক্ষিত একটি কেবিন আছে হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে দেখেন, কারা নিচ্ছে চিকিৎসা? তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা, বা তার স্বজনদের কেউ? তিনি অভিযোগ করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রাইভেট রোগী হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভালো সেবা নিচ্ছেন কেবিনে ভর্তিরত ব্যক্তি।

তাদের এসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাখা সংরক্ষিত কেবিনে ভর্তিরত রোগীর নাম আব্দুল বাছিত। তিনি পার্শ্ববর্তী ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা।

আব্দুল বাছিতের স্বজন কামরুল হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। পরে এখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে এখানে ভর্তি হই। তিনিই আমাদেরকে এই কেবিনে দিয়েছেন। তবে আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য নই।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিলোয়ার হোসেন সুমনের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, টিকিট কাউন্টারে বহিরাগতদের বিষয়ে আমার জানা নেই। এখনই ব্যবস্থা নেব। টিকিট সার্ভারে মহিলাদের ১০২ নং কক্ষ থাকায় অটোমেশন প্রক্রিয়ায় হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। চিকিৎসকের সংকট থাকায় তাদেরকে এক সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জনবল সংকটের অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ইসিজি করার বেডের উপরে সিসি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি শুধু আমি মনিটরিং করি। আমি ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারেন না। গোপনীয় বিষয়টি আপনি মনিটরিং করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি?

সার্বিক বিষয় নিয়ে সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. মনসির চৌধুরী বলেন, ওয়ার্ড বয়ের ইনজেকশন পুশ এইটা কোনভাবেই করতে পারেন না। এরজন্য নির্ধারিত লোক রয়েছেন। মহিলাদের ইসিজি বেডের উপর সিসিটিভি ক্যামেরার বিষয়টি দৃষ্টিকটু। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতাল ভবনে প্রবেশ করে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের চিত্র ধারণ করতে পারেন না। এই বিষয়ে অধিদপ্তরের নির্দেশনা আছে। এইগুলোর বিরুদ্ধে অচিরেই আমি ব্যবস্থা নেব।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *