সারাদেশ

জাতীয় ঈদগাহ সড়কে চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা

ডেস্ক রিপোর্ট: আর মাত্র এক দিনের অপেক্ষা। ঈদকে কেন্দ্র করে টানা ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। লম্বা ছুটি উপভোগ ও পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। ফলে অনেকটায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকা।

একইসঙ্গে ঈদ যাত্রায় দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি রাজধানীতে চলাচলকরী গণপরিবহনে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনে অনেকটাই গণপরিবহন সংকটে ভুগছে নগরবাসী।

এদিকে মুঠোফোন অপারেটরদের পরিসংখ্যানের এক তথ্য মতে, গেল দুই দিনে রাজধানী ছেড়েছেন ২০ লাখের বেশি মুঠোফোন সিমধারী। একই সঙ্গে দুদিনে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন সাড়ে ৯ লাখের বেশি সিমধারী ব্যক্তি।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এবং বাংলামোটর ঘুরে ফাঁকা রাজধানী ও গণপরিবহন সংকটের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কোথাও নেই সেই চিরচেনা যানজট। সীমিত হারে চলাচল করছে যানবাহন। কিছু সময় পর পর আসছে গাড়ি। বিভিন্ন বাস পয়েন্টে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকছেন গন্তব্যগামী সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ গণপরিবহনেই থাকছে যাত্রী সংকট ফাঁকা পরে থাকছে আসনও। তবে যানজট বিহীন সড়কে চলাচলে সীমিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে অনেকটা উচ্ছ্বাসিত ভাব প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।

তবে যাত্রী সংকটে অনেকটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে যাত্রী সংকট ও ঈদ উৎসবের কারন দেখিয়ে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।

গাবতলী থেকে সায়দাবাদ গামী যাত্রী মো. রানা বার্তা ২৪.কমকে বলেন, বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। সায়দাবাদ থেকে গাড়ি। বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় ২০ মিনিট দাড়িয়ে থেকে গাড়ি পেয়েছি। রাস্তায় গাড়ি খুব কম। কোন যানজটও নেই। আবার গাড়িতে যাত্রীও অনেক কম। তবে যাত্রী কম থাকলেও ঈদের কারনে গাড়ির ভাড়া বেশি নিচ্ছে।

মেহেদী নামের আরেক যাত্রী বলেন, রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ কম থাকার কারণে কোনো যানজট নেই। দ্রত সময়ের মধ্যে যেকোনো জায়গা পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। তবে ভাড়াটা৷ একটু বেশি নিচ্ছে। এই সময় আসলে ভাড়া একটু বেশি নিলেও কিছু বলা যায় না।

এদিকে গাড়ি সংকটে কারণ জানতে চাইলে গাবতলী লিঙ্ক পরিবহনের চালকের সহকারী শফিকুল ইসলাম বাবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কোম্পানির মোট ৬০ টি গাড়ি। এর মধ্যে ৪০ টা গাড়িই দূরপাল্লার যাত্রী নিয়ে রিজার্ভ গিয়েছে। অনেকে আবার ভেঙে ভেঙে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। সব কোম্পানির গাড়িই এভাবে ঢাকার বাইরে টিপে যাচ্ছে। তাই ঢাকায় গাড়ি কম।

ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোডে কোন যাত্রী নেই। গাড়ি পুরোপুরি ফাঁকা। একটাা গাড়ি গাবতলী থেকে সাইদাবাদ ঘুরে আবার গাবতলী আসতে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার তেল লাগে। প্রতিদিন ১৮০০ টাকা রোড খরচ লাগে। মালিককে দিতে হয় ২৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে অনেকগুলো টাকা খরচ। তারপর এসব খরচ শেষে যে টাকা থাকবে সেই টাকা আবার আমাদের স্টাফদের মধ্যে তিন ভাগ হবে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭০০/৮০০ টাকা ভাড়া হয়েছে। তেল খরচও ওঠেনি। এসব খরচ করে আমাদের ভাগের ভাগ ৫০০/৬০০ টাকাও থাকে না। আমাদেরও তো ঈদ আছে ভাই। আমাদেরও সংসার আছে। ঈদের সময় ভাড়ামেরে ঘরে যদি কয়টা টাকা নিয়ে যেতে নাই পারি তাহলে আমাদের সংসার চলবে কি করে? রাস্তায় যাত্রী নেই। আবার ঈদ। তাই ঈদ উপলক্ষে গাড়ির খরচ পোষাতে একটু বেশি ভাড়া৷ নিচ্ছি।

মোবাইল অপারেটররা, সিমধারী বলতে একেকজন সিম ব্যবহারকারীকে বুঝিয়েছেন (ইউনিক ইউজার)। মুঠোফোন সিমধারীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও থাকেন, যাদের অনেকেই মুঠোফোন ব্যবহার করেন না। ফলে ঠিক কত মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, সেই হিসেবে নেই কারও কাছেই।

ঈদ উপলক্ষে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে গেল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসীরা।

মুঠোফোন অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর সামনে রেখে গত দুদিনে রাজধানী ছেড়েছেন ২০ লাখের বেশি মোবাইলফোন সিমধারী। অপরদিকে ৬ ও ৭ এপ্রিল ঢাকায় প্রবেশ করেছেন সাড়ে ৯ লাখের বেশি সিমধারী ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে মোবাইলফোন ব্যবহার করেন না এমন প্রবীণ নারী–পুরুষ ও শিশুরা থাকতে পারে। ফলে প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন এবং প্রবেশ করেছেন সেই হিসাব পাওয়া কঠিন।

ঈদ উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে গেল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এরপর শুক্র ও শনিবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি এবং মাঝে রবিবার পবিত্র শবে কদরের ছুটি পড়ে। পবিত্র ঈদুল ফিতরে এবার লম্বা ছুটি রয়েছে। মূল ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। এর পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রবিবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। এতে টানা পাঁচ দিন ছুটি নিশ্চিত।

এদিকে পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামানের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ঈদের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। সে হিসাবে ঈদের সময় প্রতিদিন গড়ে বাড়ি যান ৩০ লাখ মানুষ।

গত বছর ঈদুল ফিতরের সময়ে ঈদের আগে পাঁচ দিনে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছিলেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *