আক্কেলপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প জরাজীর্ণ ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস বাসিন্দাদের

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৪টি ব্যারাকে টিনের ১২০টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ৫০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।
ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালার নিচে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। বেড়ার টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরে খুলে পড়ছে। ঘরের বেশির ভাগ দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা। শৌচাগার বেহাল। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর এলাকার হাস্তাবসন্তপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর এই করুণ দশা।

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ১২০টি পরিবারের মধ্যে ৫০টি পরিবার এখন আর এসব ঘরে থাকে না। সেই ঘরগুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, হাস্তার বিলের পূর্বপাড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৪টি ব্যারাকে টিনের ১২০টি ঘর রয়েছে। অনেক ঘরে তালা ঝুলছে। প্রতিটি ঘর ও শৌচাগার বেহাল। টিনের চালায় মরিচা ধরে ফুটো হয়েছে। ঘরের মেঝে ও বারান্দার মাটি সরে গেছে। মরিচা ধরে টিনের বেড়া ক্ষয়ে ফাঁকা হয়ে আছে। ওই ফাঁকা অংশ দিয়ে অনায়াসে একজন ব্যক্তি ঘরে ঢুকে যেতে পারে। ফলে চুরির আশঙ্কায় দিন কাটে বাসিন্দাদের।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাস্তার বিলের পাড়ে প্রথমে ৩০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৩০টি পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৩ সালে আরও ৯০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেই ঘরগুলো ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন।

* টিনের চালায় মরিচা ধরে ফুটো হয়েছে। ঘরের মেঝে ও বারান্দার মাটি সরে গেছে। * কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালার নিচে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন।
বাসিন্দারা বলেন, ব্যবহারের নয়-দশ বছরের মধ্যে প্রতিটি ঘরের টিনের চালা ও টিনের বেড়ায় মরিচা ধরেছে। ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। একই অবস্থা প্রতিটি ব্যারাকের শৌচাগারের। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়ে। শীতের মৌসুমে টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে বাতাস ঢোকে। বৃষ্টির সময় তাঁরা চালার নিচে পলিথিন বেঁধে রাখেন। বর্তমানে যে অবস্থা, তাঁদের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আলেয়া বেগম বলেন, টিনের চালা ও দেয়ালের টিনে মরিচা ধরেছে। বর্ষার সময় ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ে। এ কারণে পলিথিন দিয়ে রেখেছেন। বর্ণা বেগম বলেন, নির্মাণের পর ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। এ কারণে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শৌচাগারগুলোও ব্যবহার করা যায় না। তাঁরা গরিব মানুষ বলে অবহেলায় পড়ে আছেন।

দীনা রানী বলেন, ‘ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ে। খুব কষ্টে আছি। সরকারি লোকজন এসে লিখে নিয়ে যায়; কিন্তু কোনো মেরামত করে না।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা আরও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে তাঁদের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রকল্পের প্রথম ৩০টি ঘরের বাসিন্দারা তাঁদের সামনে হাস্তার বিলের একাংশ (প্রায় ২০ বিঘা) পেয়ে সেখানে মাছ চাষ করছেন। পরে নির্মিত ৯০টি ঘরের বাসিন্দারা তাঁদের সামনে প্রায় ৩০ বিঘা আয়তনের বিলটি পাননি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান (৭০) বলেন, অল্প কিছু লোক বিলের সুফল ভোগ করতে পেরেছেন। কিন্তু অন্যরা পাননি। প্রতিবছর তাঁদের প্রাপ্য বিলটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বিলটি ইজারা দেওয়া বন্ধের জন্য দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবারও বিলটি ছয় বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।

হাস্তাবসন্তপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সংকটে নিজ উদ্যোগে ঘরগুলো মেরামত করতে পারছেন না বাসিন্দারা।

আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী বলেন, ভূমিহীন পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর। প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পৌরসভা প্রয়োজনীয় তহবিল পেলে ঘরগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেবে। আর হাস্তার বিলটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বারবার বিলটি ইজারা দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলার সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, স্থানীয়ভাবে ঘরগুলো মেরামতের সুযোগ নেই। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প শাখায় যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা ঘরগুলো মেরামতের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সেখানে পাঠাবেন। বিল ইজারার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মন্ত্রণালয় বিলটি ইজারা দিয়েছে। এখানে স্থানীয়ভাবে কিছু করার নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *