ক্ষেতলালে ঠিকাদার লাপাত্তা, দেড় বছর ধরে বন্ধ কাজ
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা উচ্চবিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে। শিক্ষকেরা বলেন, কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার চলে গেছেন। এদিকে কাজের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি এর জবাব দেননি।
গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ইটাখোলা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে নতুন একাডেমিক ভবনের আরসিসি পিলার তোলা হয়েছে। আরসিসি পিলারগুলোতে বিমের ঢালাই কাজ করার জন্য কাঠ লাগানো রয়েছে। সেই কাঠগুলো নষ্ট হয়ে খুলে পড়ে যাচ্ছে। মাঠে কিছু নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ফলে শিক্ষার্থীরা মাঠে ঠিকমতো খেলতে পারছে না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২৮। শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতায় গাদাগাদি করে ক্লাস নিতে হয়। ফলে নতুন ভবনটি তাঁদের খুব দরকার। কিন্তু নতুন ভবনের কাজ আর শেষ হচ্ছে না।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরজাহান বলে, ‘আমাদের স্কুল ভবনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। স্কুল মাঠে বালু ও ইটের খোয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে।’
ইটাখোলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুর রব বলেন, ঠিকাদার আরসিসি পিলার তুলে রেখে সাইট থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গেছেন। দেড় বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। অথচ দেড় বছর আগেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কাজ শুরু করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ইটাখোলা উচ্চবিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় নওগাঁর বক্তারপুরের ঠিকাদার মোছা. আকলিমা বেগম। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ২৯ জুলাই এ কাজের নির্ধারিত এক বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ঠিকাদার শুধু আরসিসি পিলার তুলেছেন। ঠিকাদার আংশিক বিল নিয়েছেন। দেড় বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান চলতি বছরের ১০ আগস্ট ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করার তাগাদা দিয়েছেন। চিঠি দেওয়ার চার মাস অতিবাহিত হলেও ঠিকাদার কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মোছা. আকলিমার মুঠোফোনে কল করা হলে এক ব্যক্তি ফোন তুলে নিজের নাম মোস্তাফিজুর রহমান জানান। তিনি বলেন, ‘আকলিমা আমার স্ত্রীর নাম। আমি ইটাখোলা উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ করছি। সমস্যার কারণে কাজটি বন্ধ রেখেছি। শিগগিরই কাজটি আবার শুরু করব।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার জন্য একাধিকবার তাগাদাপত্র দিয়েছে। তারপরও ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। এখন পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার ২০ লাখ টাকা বিল নিয়েছেন। কিন্তু সেটি কাজের তুলনায় কম।