জয়পুরহাটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষ , টানা ৬ দিন ধরে ট্রাক চালাচ্ছিলেন চালক

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে দুটি যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনায় ট্রাক নাকি অটোরিকশাচালক কার দোষ ছিল, তা সামনে চলে এসেছে। তবে অটোরিকশাচালক ঘটনার আগের রাতে ঘুমাননি। আর ট্রাকচালক ট্রাক চালাচ্ছিলেন বিরামহীনভাবে।

ক্ষেতলাল-বটতলী সড়কের ক্ষেতলাল পৌর শহরের মালিপাড়া এলাকায় গত সোমবার ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই অটোরিকশাচালকসহ দুই ও পরে তিনজন হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় ক্ষেতলাল উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরীন জাহান গুরুতর আহত হন। তিনি ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন।

পাঁচজন যাত্রী নিয়ে সোমবার সকাল ১০টার পর জয়পুরহাট বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে অটোরিকশাটি ক্ষেতলালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পথে মালিপাড়ায় দুর্ঘটনায় ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর বটতলী বাজারে এসে ট্রাকটি ফেলে চালক ও সহকারী পালিয়ে যান। সেখান থেকে ক্ষেতলাল থানা–পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে। এ ঘটনায় গত সোমবার সন্ধ্যায় নিহত অটোরিকশাচালক আমজাদ হোসেনের ছেলে আবদুল্লা রিফাত মণ্ডল বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা করেন। ওই রাতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ট্রাকচালক সেলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অটোরিকশাচালক আমজাদ আগের দিন রাতে ক্ষেতলাল থানা–পুলিশের সঙ্গে ডিউটিতে ছিলেন। পুলিশের ডিউটি শেষ করে গত সোমবার সকালে অটোরিকশায় একটু ঘুমান তিনি। তিনি সকাল ১০টার পর জয়পুরহাট বাস টার্মিনাল থেকে পাঁচ যাত্রী নিয়ে ক্ষেতলালের উদ্দেশে রওনা দেন। ট্রাকচালক সেলিম উদ্দিনও বিরামহীনভাবে ট্রাক চালিয়েছেন বলে র‍্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।

অটোরিকশাচালক আমজাদের ছেলে আবদুল্লা রিফাত মণ্ডল বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাতে আমার বাবা অটোরিকশা নিয়ে সারা রাত ক্ষেতলাল থানা–পুলিশের সঙ্গে ডিউটি করেছে। এ কারণে বাবা ওই দিন রাতে বাড়িতে ছিলেন। সোমবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে বাবার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে। তখন আমার বাবা অটোরিকশা নিয়ে জয়পুরহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিলেন। এ কথোপকথনের প্রায় এক ঘণ্টা পর শুনি, আমার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।’

জয়পুরহাট র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মোস্তফা জামান বলেন, ট্রাকটির চালক টানা ছয় দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরতিহীনভাবে গাড়ি চালিয়েছেন। গত রোবরার রাতে নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে ধান নিয়ে বগুড়ার দুঁপচাচিয়া যান। সেখানে ধান আনলোড করে সকালে আবার রংপুর যাচ্ছিল। পথে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। পরে চালক ট্রাকটি বটতলী বাজারে রেখে পালিয়ে যান।

জানতে চাইলে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক অটোরিকশা থানায় পালাক্রমে ডিউটি করে। আমজাদ আগে দিন থানায় ডিউটি করেছেন কি না, তা বলতে পারছি না। যদি কেউ ডিউটি করেন, তাহলে নায্য ভাড়া দেওয়া হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *