নতুন ফলাফলে আক্কেলপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত সবাই বাদ পড়ল
এবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার স্থগিত হওয়া ফলাফলে আক্কেলপুর উপজেলার রোয়াইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর তিন শিক্ষার্থীর এমন ফলাফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গ্রামবাসী খুশি হয়েছিলেন। তবে তাঁদের আনন্দ বেশিক্ষণ টেকেনি। গতকাল বুধবার রাতে সংশোধিত ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর কেউই বৃত্তি পায়নি।
ফলাফল নিয়ে এমন বিড়ম্বনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বাদ পড়া তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা বলেছেন, সন্তানদের কৃতিত্বে তাঁরা উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ও তাঁদের সন্তানেরা লজ্জা পাচ্ছেন। এ ঘটনায় তাঁদের সন্তানদের কোমল মনে দাগ কেটে গেল।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণ দেখিয়ে একই দিন সন্ধ্যায় এ ফল স্থগিত করার কথা জানায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এরপর গতকাল বুধবার রাতে সংশোধিত ফল প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
রোয়াইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে এ বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। এরপর কোনো শিক্ষার্থী আর বৃত্তি পায়নি। এ বছর বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয় শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। প্রকাশিত প্রথম ফলাফলে তিন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। ফলাফল প্রকাশের পর অভিভাবকেরা আনন্দ উদ্যাপন করতে মিষ্টিও বিতরণ করেছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বৃত্তির তালিকা থেকে বাদ পড়া এক শিক্ষার্থী তাঁর বাবার সঙ্গে প্রধান শিক্ষক আজাদুর রহমানের কাছে এসেছে। ওই শিক্ষার্থীর বাবা প্রধান শিক্ষককে বললেন, ‘স্যার রাতে খবর পেয়ে আমাদের পরিবারের কারও চোখে ঘুম আসেনি। আমি ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না।’ তখন প্রধান শিক্ষক আজাদুর রহমান ও বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকেরা নির্বিকার ছিলেন। একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা কেঁদে ফেলেন।
চোখ মুছে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘আমি নিজেকেই মানাতে পারছি না। আমার ছেলেকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব। ফলাফলের খবর জানার পর আমরা কেউ রাতে ঘুমাতে পারিনি।’
রোয়াইড় গ্রামের বাসিন্দা ও আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, বিষয়টা খুবই কষ্টের।
প্রধান শিক্ষক আজাদুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে সংশোধিত বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় এ বিদ্যালয়ের ওই তিন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর নেই। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই হতাশ হয়েছেন।
জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতকাল রাতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নতুন ফলাফলে কে বাদ পড়ল আর কে যোগ হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
সূত্র : প্রথম আলো