প্রাধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেত্রী বললেন, ‘যাকে যেখানে খুশি সিট দেব, আপনি কে?’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মাহজাবিনের বিরুদ্ধে হলের আসন বরাদ্দ নিয়ে প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমানকে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ফাইজা মাহজাবিন হলের ২১৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। ফাইজার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর হলেও তাঁর পরিবার বর্তমানে কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা এলাকায় থাকে। ২০২২ সালের ২৭ জুলাই যাতায়াত সমস্যা, আর্থিক সমস্যা ও নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে হলে থাকার জন্য আবেদন করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রেয়সী সানাকে আসন বরাদ্দ দেন। ওই ছাত্রী গতকাল ওই কক্ষে উঠতে গিয়ে দেখেন, সেখানে রায়হানা আনজুম নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী আছেন। বিষয়টি প্রেয়সী হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে তিনি দুজনকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে আনেন। এরপর সেখানে হাজির হন ফাইজা মাহজাবিন। প্রাধ্যক্ষ পদার্থবিজ্ঞানের ওই শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চান, ‘আপনি কীভাবে হলে উঠলেন?’ তখন ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমাকে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তুলেছেন।’ তখন ফাইজা মেহজাবিন বলেন, ‘আমি তাকে তুলেছি।’ প্রাধ্যক্ষ কারণ জানতে চাইলে ফাইজা বলেন, ‘যাকে যেখানে খুশি সিট দেব, আপনি কে? আমি হল ছাত্রলীগের সভাপতি। হলে আমার কথায় সব চলবে।’

সহকারী প্রাধ্যক্ষ আল-আমিন এবং ওই কক্ষে থাকা আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রেয়সী সানা প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী ফাইজা মাহজাবিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি সিনিয়র দেখে পদার্থবিজ্ঞানের ওই ছাত্রীকে হলে তুলেছি। আমি কোনো ধরনের অশালীন কথা বলিনি। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। প্রভোস্ট (প্রাধ্যক্ষ) স্যারকে বলেছি, মেয়েটির সিট দরকার।’

তবে প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান বলেন, ‘হলে কোনো শিক্ষার্থী উঠবেন আর কোনো শিক্ষার্থী উঠবেন না—সেই এখতিয়ার সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের। একজন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। অথচ ফাইজা আমাকে বলেছেন, “যাকে যেখানে খুশি সিট দেব, আপনি কে?” ফাইজা এখনো হলের ফি দেননি। গত বছরের ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা হলের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে হলে ৩৭৯ জন ছাত্রী থাকেন। নতুন হলে অনেক সমস্যা থাকবে। ধীরে ধীরে সেগুলোর সমাধান হবে।’

কাজী ফাইজা মাহজাবিনের বিরুদ্ধে হলের শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অভিযোগ করেছেন। ছাত্রীদের ভাষ্য, প্রায়ই দিন ভোরে কোনো কারণ ছাড়াই হলে চিৎকার করেন ফাইজা। তাঁর কর্মকাণ্ডে তাঁরা বিরক্ত। হলের ভর্তি ফি ১ হাজার ২৫০ টাকা। কিন্তু ফাইজা ফি দেননি।

এ বিষয়ে কাজী ফাইজা মাহজাবিন বলেন, ‘আমি ফি দিয়েছি। রিসিটটা আমার কাছে এখন নেই। তবে এক দিন পর প্রমাণ দিতে পারব। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *