বগুড়ার শেরপুরে আওয়ামী লীগ নেতার চাপে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

বগুড়ার শেরপুরে এক নারী উদ্যোক্তার খামারে পল্লী বিদ্যুতের অগভীর নলকূপের সংযোগ দেওয়ার এক ঘণ্টা পরই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার চাপে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পালাশন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ বিকেল চারটার দিকে শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল কার্যালয় থেকে শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগটি দিয়েছেন উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রথিন্দ্র নাথ বর্মন।

লিখিত অভিযোগে যাঁদের নামে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশালপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম (৫০)। তিনি একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য পদে আছেন। এ ছাড়া লিখিত অভিযোগে রেজাউল ইসলামের দুই ভাই মো. মাকেজ (৪৮) ও মো. রুবেলের (৪০) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের জোনাল কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশালপুর ইউনিয়নের পালাশন গ্রামে বীনা রানী কুন্ডু নামের এক নারীর নামে অগভীর নলকূপের মিটার সংযোগ দেওয়া হয়। এই সংযোগকে কেন্দ্র করে রেজাউল ইসলামসহ তাঁর দুই ভাই ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের জামাইলহাট অভিযোগ কেন্দ্রে এসে সেখানকার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় তাঁরা বীনা রানী কুন্ডুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা অভিযোগ কেন্দ্রের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানকার কর্মরত সবাইকে জিম্মি করে ফেলেন। এরপর পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হন।

এ নিয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রেজাউল ইসলাম আওয়ামী লীগে তাঁর পদের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশালপুর ইউনিয়নের পালাশন গ্রামে তাঁর শ্বশুর আবদুস সাত্তারের নামে একটি অগভীর নলকূপের সংযোগ আছে। নলকূপটি তিনি নিজেই পরিচালনা করেন। একই গ্রামে বীনা রানী কুন্ডুর নামে আরেকটি নলকূপের সংযোগ দেওয়ার কারণে তিনি বাধা দিয়েছেন। তবে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি ও তাঁর লোকজন কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেননি বলে দাবি করেন।

বীনা রানী কুন্ডু বলেন, পালাশন গ্রামে তাঁর একটি খামার আছে। সেই খামারের একাধিক পুকুরে মাছের পোনার উৎপাদনসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা হয়। সেখানে গবাদিপশুর খামার ও বিভিন্ন মৌসুমে ফসলের চাষ করা হয়। এই খামারে পানির প্রয়োজনীয়তায় তিনি বৈধ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুতের অগভীর নলকূপের সংযোগ অনুমোদন পেয়েছেন। কিন্তু খামারে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকলে তাঁর চাষাবাদে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হবে বলে দাবি করেন তিনি।

শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রথিন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, জামাইলহাটের পল্লী বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রে এমন ঘটনায় তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামীতে ওই এলাকার পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *