বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ মিলনায়তনে বিয়ের অনুষ্ঠান, প্রতিবাদে মানববন্ধন

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান আয়োজনের বদলে বউভাত, বিবাহোত্তর সংবর্ধনা ও পারিবারিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের শিক্ষক পরিষদের এক নেতার ছেলের বউভাত ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিবাদে গতকাল রোববার কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। এ সময় দলটির নেতা-কর্মীরা সরকারি কলেজ মিলনায়তন শিক্ষকদের পারিবারিক কাজে ব্যবহার করায় কঠোর সমালোচনা করেন।

মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কলেজ শাখার নেতা-কর্মীরা বলেন, সরকারি কলেজ মিলনায়তনে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজন অনৈতিক ও বেআইনি। মিলনায়তনে শিক্ষকের ছেলের বউভাত ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুমতি দিয়ে কলেজ প্রশাসন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষ্ঠান আয়োজনের বদলে ভবিষ্যতে কলেজ মিলনায়তন অন্য কাজে ব্যবহার করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে জানানো হয়, গত শুক্রবার কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মাহতাব হোসেন মণ্ডল তাঁর বড় ছেলের বিয়ের বউভাত ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে হাজারখানেক অতিথির জন্য প্রীতিভোজের আয়োজন ছিল এবং বর-কনের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার জন্য মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। মিলনায়তনসংলগ্ন স্কাউট ভবন চত্বরে রান্নার আয়োজন করা হয়। রান্না ও খাবার পরিবেশনে কলেজের কর্মচারী এবং বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যদের কাজে লাগানো হয়। বউভাত অনুষ্ঠানে সব শিক্ষক ও কর্মকারীকে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলী ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। কলেজ মিলনায়তনে শিক্ষক পরিষদের নেতার ছেলের বউভাত অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষক মাহতাব হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘আমার ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারী। যোগাযোগের সুবিধার্থে সবাই কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া ২০ বছর ধরে এ কলেজে শিক্ষকতা করছি। ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান কলেজে আয়োজন করার একটা অধিকারও রয়েছে। সব দিক বিবেচনা করেই কলেজ মিলনায়তনে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও প্রীতিভোজ আয়োজন করেছি। এখানে অনুষ্ঠান করা নিয়ে যারা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।’

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কলেজ শাখার সদস্যসচিব নিয়তি সরকার। উপস্থিত ছিলেন কলেজ শাখার আহ্বায়ক ধনঞ্জয় বর্মণ, সংগঠনটির জেলা সদস্য মিষ্টি রানী, সুরঞ্জিত, বিপ্লব প্রমুখ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, কলেজ মিলনায়তনে একসময় নবীনবরণ, শিক্ষকদের বিদায় অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসের আলোচনা সভাসহ শিক্ষার্থীদের জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। তবে এখন এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের বদলে মিলনায়তন ব্যবহৃত হয় পরীক্ষার হল হিসেবে। শিক্ষার্থীদের বদলে এ মিলনায়তনে এখন মাঝেমধ্যেই শিক্ষকদের পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অতীতে সাবেক অধ্যক্ষ ছালামত উল্লাহ তাঁর সরকারি বাসভবনে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। তবে এতে আপত্তির কিছু ছিল না। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ যোগ দেওয়ার পর থেকে কলেজে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে মিলনায়তনে শিক্ষকদের ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকের ছেলের বউভাত অনুষ্ঠান শহরের অন্য একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভেন্যু নিয়ে সমস্যা হওয়ায় কলেজ মিলনায়তনে বউভাত অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ওই শিক্ষকের কাছ থেকে মিলনায়তন ভাড়াবাবদ ১২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে সত্যি, তবে উপহারসামগ্রী কলেজ প্রশাসন থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *