বগুড়ার শাজাহানপুরে হলো ৩শ’ বছরের ঐতিহ্য খারুয়া মেলা

বগুড়ার শাজাহানপুরের প্রায় ৩শ’ বছরের ঐতিহ্য খারুয়া মেলা। সন্ন্যাস পূজাকে ঘিরে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামে খারুয়া নদীর পাড়ে বসে আসছে এ মেলা।

বড় মাছ, ফাল্গুনের মিষ্টি বড়ই, হরেক রকমের মিষ্টি, গৃহস্থলির সামগ্রির জন্য সুপরিচিত এ মেলা। চুরি ফিতা কিনতে মেলার পরদিন সকালে শুরু হয় বৌ মেলা, চলে দুপুর পর্যন্ত। এবছর মেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩ মেট্রিক টন মাছ ও ৪ মেট্রিক টন মাছ। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল ম্যাজিক নৌকা, নাগরদোলা, হরেক রকমের খেলনা।

উৎসবকে কেন্দ্র করে নাইওরিতে ভরে উঠেছে জালশুকা ও আশপাশ এলাকার প্রতিটি বাড়ি। জনশ্রুতি আছে, প্রায় ৪শ’ বছর আগে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহে যে সন্ন্যাস পূজার প্রচলন হয়েছিল ওই সন্ন্যাসীর মৃত্যুর পর তার মরদেহ পানিতে ভেসে জালশুকা খারুয়া খালে এসে পৌঁছে। এরপর তাকে ঘিরে জালশুকায় বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজার প্রচলন করে।

এর প্রায় ১শ’ বছর পর থেকে পূজাকে ঘিরে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবারে বসছে খারুয়া মেলা। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় পুজা বন্ধ হলেও টিকে আছে মেলা। খোট্টাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক জানিয়েছেন, গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অন্যতম অনুসঙ্গ খারুয়া মেলা। শুধু জালাশুকা নয়, এ মেলার ব্যপ্তি ঘটেছে আশপাশ উপজেলাতেও। খারুয়া মেলাকে ঘিরে একই দিনে গাবতলীর বাগবাড়ি ও পেরীরহাট এবং ধুনটের বমগাড়াতেও বসছে মেলা।

মেলার ইজারাদার উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর জানিয়েছেন, করোনা মহামারিতে সরকারি ভাবে মেলা ইজারা হয়নি। সে সময় মেলার পরিসরও ছিল সীমিত। কিন্তু এবার মেলা সরকারি ভাবে ইজারা হয়েছে। এবছর মেলার ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থী বেড়েছে। মেলায় যাতে কোন বিশৃংখলা না হয়, দর্শনার্থীরা যাতে সুন্দর পরিবেশে মেলার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সে জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি মেলা কমিটির সদস্যরাও অত্যন্ত সজাগ ছিল।

গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী সাগর হোসেন জানিয়েছেন, তিনি প্রতি বছর খারুয়া মেলায় মাছ বিক্রির জন্য আসেন। এ বছর তিনি ৩০ মণ মাছ বিক্রি করেছেন। দামও পেয়েছেন ভালো। অপর মাছ ব্যবসায়ী মোমিন সরকার জানিয়েছেন, তার দোকানে হিমাগারে রাখা সামদ্রিক মাছ এবং মিঠা পানির টাটকা বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই কাতলা তুলেছিলেন। সামদ্রিক মাছের চেয়ে মিঠা পানির মাছের কাটতি বেশি হয়েছে।

শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানী গ্রামের মিষ্টির দোকানদার খোকা মিয়া জানিয়েছেন, তিনি এ বছর খারুয়া মেলায় প্রায় ৭০ মণ মিষ্টি বিক্রি করেছেন। শিশুদের বিনোদনের জন্য গাবতলী উপজেলার মহিষাবাদ দক্ষিণপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম এনেছিলেন ম্যাজিক নৌকা। ওই নৌকায় উঠে আনন্দ উপভোগ করেছে শিশুরা। নাগরদোলা ও ম্যাজিক নৌকায় জন প্রতি গুণতে হয়েছে ২০ টাকা। পাবনা থেকে আসা চুরি ফিতার দোকানী জেসমিন জানিয়েছেন, মেলায় বিক্রি সন্তোষজনক।

সূত্র : দৈনিক করতোয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *