সারাদেশ

ইসরায়েলের হামলায় হামাস প্রধানের তিন ছেলে নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট: সুস্থ সবল, গায়ে স্বাভাবিক পোশাক। লোক চক্ষুর আড়ালে তাদের চলাফেরাও বেশ স্বাভাবিক। তবে কাউকে দেখলেই তারা হয়ে পড়েন অসহায়, অসুস্থ। কারো কিডনি অচল, কারো হার্ট সার্জারি, কারো লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক রোগ। এসব কেবল মুখেই নয় হাতে রয়েছে তার সচিত্র প্রমাণের কাগজ। বিভৎস সব ছবি। নানা রোগভোগের নানা অজুহাত নিয়ে তারা হাত পাতেন মানুষের কাছে। চান সাহায্য। কেউ কেউ ভিক্ষার উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেন ছোট্ট শিশুদের। কয়েক মাসের বাচ্চাকে ব্যবহার করেও টাকা আদায় করছে অনেকে। করবে না কেনো? করুণ অসহায়ত্ব দেখানো এসব মৌসুমি ভিক্ষুকের প্রতি জনের মাসিক আয় একজন চাকরিজীবীর থেকে কম নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিক্ষাবৃত্তি করেই মাসে একেক জন ভিক্ষুকের আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তাই সুস্থ সবল ব্যক্তিরাও অসহায়ের বেশ ধরে নামছে এমন পেশায়। কাজ ছাড়াই বিপুল আয়ের লোভে সময়ের সাথে বাড়ছে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যাও। আর এ জন্য রমজান ও ঈদের মৌসুমটাই সবচেয়ে মোক্ষম।

ঈদে বিপুল অর্থ যোগাড়ের টার্গেট নিয়ে নামে মৌসুমি ভিক্ষুকদল  রমজান আসলেই ভিক্ষার টার্গেট নিয়ে রাজধানী আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। ঈদ সামনে রেখে বিপুল অর্থ সংগ্রহের টার্গেট থাকে তাদের।

তথ্য বলছে, রমজানে শুধু রাজধানীতেই প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ নামে ভিক্ষাবৃত্তিতে। যাদের ৯৯ শতাংশই সুস্থ, কর্মক্ষম। টাকা সংগ্রহের অতিরিক্ত মোহ থেকে এই ব্যক্তিরা অবলম্বন করছেন বিভিন্ন কৌশল। যা সাধারণ মানুষের জন্য ধোঁকাতো বটেই, ভোগান্তিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাধারণরা বলছেন, ভিক্ষাবৃত্তি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে। রাস্তায় ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়ছে। সড়কে বেহায়া নাছোড়বান্দার মতো আচরণ তাদের। এছাড়া জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে এসব বেশধারী ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে। রাস্তা-ঘাট, শপিং মল, বাস কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয় সব খানেই তাদের আছে দৌরাত্ম্য।

আকরাম হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, ‘আমরা রাস্তায় চলতে গেলেই এখন ভয় পাই। ভিক্ষাবৃত্তি এখন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। এটা এখনি কমানো না গেলে ভবিষ্যতে রাজধানীতে এর প্রভাব ব্যাপক আকারে পড়বে। ভোগান্তি বাড়বে।’

ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা মাসুদ বিল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত টাকার লোভে এরা মাঝে মাঝে উদ্মাদ হয়ে উঠেন। বিরক্ত করার পাশাপাশি জোর করেও টাকা আদায় করেন অনেকে। এটা আমাদের জন্য দিন দিন ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠছে।

সময়ের সাথে বাড়ছে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যাও এদিকে, বিনা পরিশ্রমে আয়ের চক্রে পুর্নবাসন কিংবা স্থায়ী স্বাবলম্বী কোনটাতেই আগ্রহী নয় তারা। বেশির ভাগ ভিক্ষুক বেশধারী হওয়ায় তাদের সরকারের পুর্নবাসন কার্যক্রমের আওতায় আনা যাচ্ছে না বলে দাবি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের।

সত্যি কি পুর্নবাসন কিংবা স্থায়ী স্বাবলম্বীতে আগ্রহী নয় ভিক্ষুকরা?

এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় গিয়ে মেলে তার সত্যতাও। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রায় কুড়ি জন ভিক্ষুককে সহযোগিতার আশ্বাস দিলে পরিচয় গোপন করেন তারা। টাকা সংগ্রহে নিজেদের অসহায় সাজাতে দ্বিধা না থাকলেও স্থায়ী পুর্নবাসনে আগ্রহ নেই বেশধারী এসব ভিক্ষুকদের। বিনা পরিশ্রমে অর্থ সংগ্রহই মূল লক্ষ্য।

এ থেকে মুক্তির উপায় কি?

ভিক্ষাবৃত্তি যেন সামাজিক ব্যাধিতে রূপ না নেয় সেজন্য এখনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের কঠোর অবস্থান ও সামাজিক সচেতনতা। অনৈতিকভাবে টাকা সঞ্চালন থাকলেও এর প্রভাব সামাজিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আইনুন ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে উৎসব ঘিরে কিছু মানুষ এই পেশায় নামে। এতো মানি সার্কুলেশনটা হয়। বড়লোকের টাকা গরিবের কাছে যায়। তবে এটা সমাজের জন্য ভালো নয়। এটা থামানো জরুরি। সে জন্য আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সচেতনতাই মুক্তির পথ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *