সারাদেশ

মোবাইল খাতে কর বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে গ্রাহক ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে

ডেস্ক রিপোর্ট: এমনিতেই উচ্চ করের বোঝায় আক্রান্ত মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাত; এর ওপর আবার যুক্ত হলো, ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক। বিশেষ করে বিগত বছরের আগস্ট থেকে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে।

এ অবস্থায় অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেন।

মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এদিকে, বাজেটে সিমকার্ডের ওপর ২শ টাকার মূসক (মূল্য সংযোজন কর) বাড়িয়ে ৩শ টাকা করা হয়েছে।

সর্বপ্রথম, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে তিন দফায় বাড়িয়ে ২০২০ সালে তা ১৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাজেটে এনবিআর এবার ইন্টারনেটের সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ প্রস্তাব করেছে। এমনতিতেই মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার ওপর ভ্যাট ও সারচার্জ রয়েছে।

বিটিআরসি’র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের আগস্টে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার। পরে তা কমে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৯০ লাখ ৭৭ হাজার। অক্টোবরে এই সংখ্যা কমে হয় ১১ কোটি ৯০ লাখ ৪১ হাজার। নভেম্বরে সংখ্যা কমে হয় ১১ কোটি ৮০ লাখ ৯৬ হাজার। ডিসেম্বরে ১১ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার। জানুয়ারিতে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজারে কমে যায়।

ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাসে সামান্য উন্নতি হয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মোবাইল সেবার ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক টেলিকম শিল্প ও গ্রাহকদের ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি করবে। এর আগে এই শুল্কের হার ছিল ১৫ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ গ্রাহকেরা মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আর্থিক চাপে পড়বে। ফলশ্রুতিতে, মোবাইলের ব্যবহার সংকোচিত হয়ে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ও সরকারের রাজস্ব আহরণ হ্রাস পাবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মোবাইল ফোনের সিমের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বৃদ্ধি নতুন গ্রাহক প্রবৃদ্ধির হারকেও মন্থর করবে, যেখানে দেশে এখনো প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ সংযোগের বাইরে অবস্থান করছেন।

এই কর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া এবং জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে যা সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ (Smart Bangladesh Vision) ভিশন স্ববিরোধী। আমরা সরকারের কাছে আরোপিত শুল্ক এবং আমাদের পক্ষ থেকে প্রেরিত বাজেট সুপারিশমালা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, উচ্চ করের বোঝায় আক্রান্ত মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন পরিষেবার সম্পূরক শুল্ক আরো ৫ শতাং বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রাহকের পাশাপাশি মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষেবার সামগ্রিক ব্যবহারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, গত কয়েক প্রান্তিক ধরে যখন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে, তখন বর্ধিত করের বোঝা এ প্রবণতাকে আরো ত্বরান্বিত করবে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে কর হার বাড়ানোর এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। কারণ, এর ফলে মোবাইল ব্যবহারকারীদের সার্বিক ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনো টেলিযোগাযোগ সেবার বাইরে রয়েছে দেশের ৪১ শতাংশ জনগোষ্ঠী। এ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় গ্রাহক পর্যায়ে ডাটা ব্যবহারেও আমরা কয়েক গুণ পিছিয়ে রয়েছি। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে এ খাত থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের ৪০ শতাংশ নাগরিককে টেলিযোগাযোগ সেবার বাইরের রাখবে বলে মনে করছে, বাংলাদেশ মুঠোফোন অ্যাসোসিয়েশন। এক বিবৃতিতে তারা এ তথ্য জানিয়েছে।

এক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট এ টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে নতুন করে ৫ শতাংশ কর বৃদ্ধি করার ফলে বর্তমানে গ্রাহকের কাছ থেকে কর আদায় করা হবে ৩৯ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে গ্রাহকেরা কম পরিমাণ সেবা ভোগ করবে, যেখানে অপারেটররা মূল্যবৃদ্ধি না করলেও দিন শেষে খরচ বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে, দেশের ৪০ শতাংশ নাগরিক যেখানে এখনো টেলিযোগাযোগ সেবার বাইরে, সেখানে নতুন করে সিমট্যাক্স বাড়িয়ে ৩শ টাকা করা হয়েছে, যা আগে পূর্বে ছিল ২শ টাকা। এখানেও এই অর্থ দিনশেষে সংযুক্তির বাইরে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে আদায় করা হবে। এ ধরনের বাজেট কেন করা হলো, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *