সারাদেশ

খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সাথে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, নৃ গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা বহাল রাখার জন্য সরকারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

রোববার (২১ জুলাই) বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন।

একই সাথে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ন্যায় বিচারের স্বার্থে সংবিধনের ১৯, ২৭, ২৮ এর ৪, ২৯ এর ৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত সরকার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্দি ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ  নির্ধারণ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে সংশ্লিষ্ট কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে ‍উক্ত পদগুলো মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে মর্মেও উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।

 এ নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মোতাবেক মঙ্গলবার কোটা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ফলে ২০১৮ সালে জারি করা এ সংক্রান্ত পরিপত্র কিংবা হাইকোর্টের আদেশের আর কোন কার্যকারিতা থাকলো না।

আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, রিটকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী। এছাড়াও সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম, ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম ও অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ। এ সময় প্রধানবিচারপতির এজলাস কক্ষ কাঁনায় কাঁনায় পূর্ণ ছিল। প্রায় ৫ শতাধিক আইনজীবীর উপস্থিতিতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সরকারি চাকরিনীতি ছিল মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও তার নাতি-পুতিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধি কোটা ১ শতাংশ। ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী তখন কোটা প্রথা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। উক্ত প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে হাইকোর্ট সরকারের উপর রুল জরি করেন। এরপর হাইকোর্ট শুনানি শেষে গত ৫ জুন, ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বাতিল করে পূর্বের কোটা পদ্ধতি চালুর পক্ষে রায় দেন। হাইকোর্টের উক্ত রায়ের পর তীব্র আন্দোলন দানা বেধে উঠলে গত ৪ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ উক্ত রায় বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।

সেদিন সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল শুনানি স্থগিত রাখেন আপিল বিভাগ। একই প্রেক্ষাপটে ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আপিল বিভাগে আরেকটি আবেদন করেন। এ আবেদনের উপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের উপর ১ মাসের স্থিতিবস্থা দিয়ে ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

এ অবস্থায় আন্দোলনের গতি আরও তীব্রতর হয়। ১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দায়ের করেন। ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণে আন্দোলনকারীরা আপিলে ন্যায় বিচার পাবেন মর্মে উল্লেখ করেন। কিন্তু তারপরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকলে ১৮ জুলাই বিকালে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে শুনানি করে রোববার ২১ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *