সারাদেশ

মেট্রোরেলে নাশকতা: বিএনপি নেতা স্বপন-অসীম রিমান্ডে

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘আমি আসরের নামাজ পড়তেছিলাম। নামাজ পড়ার সময় কেমন জানি শরীরটা ভার ভার লাগছিল। প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়াতেই আমার মোবাইল বেজে ওঠে। একটানা বাজতেছিল। নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়েই আমি তড়িঘড়ি করে ফোন ধরি। মোবাইল কানে দিতেই ছেলে বলে ওঠে- “মা আঁই মরি যাইর, আঁই মরি যাইর”। আমি জিজ্ঞেস করি, তোর কি হইছে? বলে- “আঁই গুলি খাইছি”।’

শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছেলে আবুল বাশারের পাশে বসে এভাবেই ছেলের গুলিবিদ্ধের খবর পাওয়ার কথা বলতে লাগলেন পঞ্চাশোর্ধ মা সৈয়দা বেগম।

ছেলের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে দু চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে সৈয়দা বেগমের। শাড়ির আচল দিয়ে বারবার মুছছেন সেই বেদনার অশ্রু। কান্না দেখে গুলিবিদ্ধ ছেলে বাশার মাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। কিন্তু মায়ের মন মানছে কোথায়!

বেডে সুয়ে আছেন আবুল বাশার তার পাশে ঘুমাচ্ছে তার নয় মাস বয়সী শিশুকন্যা/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল আবুল বাশার একজন ভ্রাম্যমাণ আম বিক্রেতা। পেটের দায়ে গত ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট এলাকায় আম বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেলে বাশার দুই পক্ষের মাঝখানে পড়ে যান। এক পর্যায়ে দৌড়ে পালানোর সময় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন বাশার।

শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ৪০ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন আবুল বাশার। তারই পাশে নির্বিঘ্নে ঘুমাচ্ছিল নয় মাস বয়সী শিশুকন্যা। বেডের পেছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন মা সৈয়দা বেগম।

ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে সৈয়দা বেগম তাঁর ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর অনুরোধ করেন। সৈয়দা বেগম বলেন, ততক্ষণে নেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। তাই ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়।

সেদিন কীভাবে গুলির মুখে পড়েছিলেন সেটি শুনিয়েছেন আবুল বাশার। ২৭ বছরের এই তরুণ বলেন, আমি একজন ফল বিক্রেতা। যখন যে ফল পাই সেটিই বিক্রি করি। ঘটনার দিন বহদ্দারহাট মোড়ের ভোলা কাউন্টার এলাকায় ভ্যানে করে আম বিক্রি করছিলাম। আমও প্রায় শেষেরদিকে ছিল। ভেবেছিলাম অল্প যা আছে তা বিক্রি করেই ঘরে ফিরব। কিন্তু এর মধ্যেই মানুষের ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। গোলাগুলিও চলছিল। ভয়ে আমিও ভ্যান নিয়ে দৌড়াতে থাকি। হঠাৎ দেখি আমার বাম পা আর এগোচ্ছে না। আমি মাটিতে পড়ে যাই, ব্যথায় জ্বলতেছিল। তখন আমি চিৎকার করে বলতে থাকি, আমারে কেউ ধরেন। এসময় আমাকে কয়েকজন কোলে নিয়ে দৌড় দেন। কিন্তু কিছু পথ গিয়ে তারা আমাকে ফেলে দৌড় দেন। এরপর আমার পকেটে থাকা মোবাইলটি নিয়ে প্রথমে আমার মাকে ফোন দিই। এরপর এখানে (চট্টগ্রাম) আমার একটা মামা ছিল তাকেও ফোন দিই। এক পর্যায়ে কয়েকজন পথচারী ভাই আমাকে একটি রিকশায় তুলে দেন। পরে আরেকটি অটোরিকশা করে আহত একজনের সঙ্গে আমাকেও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমার বাম পায়ের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে হাঁড় ফেটে অন্যপাশ দিয়ে বেশ হয়ে গেছে।

এক প্রকার পঙ্গু হয়ে যাওয়া আবুল বাশারের এখন সব দুশ্চিন্তা এখন পরিবারকে নিয়ে। কেননা তাঁর আয়েই চলে পুরো পরিবার। তিনি বলেন, ‘আমার দুটা মেয়ে, দুজন বোন, মা ও স্ত্রী- সবাই আমার আয়ের উপর নির্ভরশীল। তাদের এখন কি হবে। এখানে কত দিন থাকতে হবে সেটিও জানি না।

আবুল বাশারের আশা সরকার তাঁর দায়িত্ব নিবে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি চাই সরকার আমাকে যাতে আয়ের একটি ব্যবস্থা করে দেয়। যেটির মাধ্যমে আমি ও আমার পরিবার চলতে পারব। এই সহযোগিতা যেন সরকার করে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আর কিছু চাই না।’

পাশে বসে থাকা স্ত্রী খুকি বেগমের চোখেও ঘুম নেই। একদিকে স্বামীর দুরাবস্থা, অন্যদিকে সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন-সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে এই নারীর মনে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর যে অবস্থা। এই চিকিৎসার খরচ আমি কীভাবে চালাবো। টাকা থাকলে তো বেসরকারি মেডিকেলে নিয়ে ভালো চিকিৎসা করাতাম। এখন উনি ভালো হয় নাকি সেটি নিয়েই চিন্তায় আছি। ছোট ছোট দুইটা মেয়ে নিয়ে আমি কীভাবে চলব।’

ছেলের শুশ্রূষা করতে করতে আবার মুখ খোলেন মা সৈয়দা বেগম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, তিনি যেন আমাদের দেখেন। আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা যেন তিনি করেন। কেননা আমার চেলে কোনরকম আম-টাম বেছে আমাদের মুখে খাওয়া তুলে দিত। এখন আমাদের কে খাওয়াবে?’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *