সারাদেশ

নবী কারিম (সা.)-এর জন্মের দিনের বিস্ময়কর ঘটনাবলি

ডেস্ক রিপোর্ট: ১২ রবিউল আউয়ালে করণীয়

০৯:৪৩ এএম | ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১ | ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছবি: ক্যালিগ্রাফি রবিউল আউয়াল (সংগৃহীত)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তার জন্মে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যার স্মরণ সব জাতি, সব যুগে করেছে। কিন্তু কবে এই মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন, তা নিয়ে সব আলোচনা রবিউল আউয়াল মাস ঘিরেই হয়ে থাকে।

১২ রবিউল আউয়াল ইসলামের ইতিহাসে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। বিশেষত দুটি কারণে ১২ রবিউল আউয়াল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। প্রথমত, সব ইতিহাসবিদের ঐকমত্য বর্ণনা মতে, এই দিনেই নবী মুহাম্মদ (সা.) লক্ষ-কোটি ভক্ত-অনুরক্তকে এতিম বানিয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী এই ১২ রবিউল আউয়ালই নবী কারিম (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন।

নবী কারিম (সা.)-এর জন্মের তারিখ

খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে নবী কারিম (সা.) ভূমিষ্ঠ হন। তার জন্ম তারিখ ২০ এপ্রিল। আরবি হিজরি সন অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে।

কেউ কেউ বলেন, রবিউল আউয়ালের ৮ তারিখ নবী কারিম (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশির ভাগ হাদিসবিশারদ একে বিশুদ্ধ বলেছেন।

নবী কারিম (সা.)-এর জীবনীকারদের মধ্যে ইবনে ইসহাক প্রথম সারির জীবনীকার। তিনি বলেন, নবী মুহাম্মদ (সা.) হাতিবাহিনীর ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। -সিরাতে ইবনে হিশাম : ১/১৫৮

আধুনিক যুগে সিরাত বিষয়ে ‘আর রহিকুল মাকতুম’ নামক গ্রন্থটির বেশ আলোচনা আছে। সেই গ্রন্থে এসেছে, সায়্যিদুল মুরসালিন মক্কায় বনি হাশিমের ঘাঁটিতে সোমবার সকালে ৯ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন, যে বছর হাতির ঘটনা ঘটে। সে বছর পারস্য দেশের বাদশাহ আনু শিরোয়ার ক্ষমতা গ্রহণের ৪০ বছর পূর্ণ হয়। -আর রহিকুল মাকতুম : ১/৪৫

তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন প্রণেতা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) নবী কারিম (সা.)-এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে আরও কিছু অভিমত উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন- এ বিষয়ে সবাই একমত যে নবী কারিম (সা.)-এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন হয়েছিল। কিন্তু তারিখ নির্ধারণে চারটি বর্ণনা প্রসিদ্ধ আছে- ২, ৮, ১০ ও ১২ রবিউল আউয়াল।

এর মধ্যে হাফেজ মুগলতাই (রহ.) ২ তারিখের বর্ণনাকে গ্রহণ করে অন্য বর্ণনাগুলোকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে ১২ তারিখের বর্ণনা। ‘তারিখে ইবনে আছির’ গ্রন্থে এ তারিখই গ্রহণ করা হয়েছে।

গবেষক মাহমুদ পাশা জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে ৯ তারিখ গ্রহণ করেছেন। এটি সবার মতের বিপরীত ও সূত্রবিহীন উক্তি। যেহেতু চাঁদ উদয়ের স্থান বিভিন্ন, তাই গণনার ওপর এতটুকু বিশ্বাস ও নির্ভরতা জন্মায় না যে তার ওপর ভিত্তি করে সবার বিরোধিতা করা যাবে। -মুফতি মুহাম্মদ শফি (করাচি) : সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ১৭

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম তারিখ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দিন হিসেবে সোমবার সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। কারণ জীবনচরিতকাররা একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম। এই সোমবার ৮ অথবা ৯ কিংবা ১২- এটুকুতেই হিসাবের পার্থক্য রয়েছে মাত্র। -ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ

এ দিনে করণীয়

নবী কারিম (সা.)-কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমাকে নবুওয়ত দান করা হয়েছে।’ -সহিহ মুসলিম : ১১৬২

মুসলিম শরিফে বর্ণিত বিশুদ্ধ এই হাদিসের আলোকে জানা যায়, প্রিয় নবীর জন্মদিনে উম্মতের করণীয় কী? এই দিনে উম্মতের করণীয় হলো, রোজা রাখা। তার প্রতি অধিক পরিমাণে দরূদ ও সালাম পাঠ করা।

অন্য হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং রোজা অবস্থায় আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হোক, এটা আমি পছন্দ করি।’ -জামে তিরমিজি : ৭৪৭

তাই নবী কারিম (সা.)-এর জন্মের দিনে নফল রোজা রাখা প্রকৃত নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নবী কারিম (সা.)-এর জন্মের ঘটনার চেয়েও তার সর্বব্যাপ্ত জীবনাদর্শ আমাদের জন্য অধিক প্রয়োজনীয়।

নবী কারিম (সা.)-এর জন্মের বিষয়টি একান্ত তার ব্যক্তিগত। কিন্তু তার সিরাত বা জীবনাদর্শ সব যুগের, সব মানুষের জন্য। বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য। আর নবীপ্রেমের প্রথম শর্ত হলো- নবীর আনুগত্য। বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন না ঘটলে নবীপ্রেমের দাবি অর্থহীন।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *