সারাদেশ

বরিশালে ১৬২ মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজার আয়োজন

ডেস্ক রিপোর্ট: বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ২৩৪ গ্রাম ওজনের ২টি স্বর্ণের বারসহ শহিদুল নামে এক ভারতীয় ট্রাক চালক আটক হয়েছে। তবে বাংলাদেশি পাচারকারীর নাম জানা যায়নি।

পাচারের ঘটনায় সিঅ্যান্ডএফ, ট্রান্সপোর্ট বা ট্রাক চালক যেই যুক্ত থাকুক দুই সীমান্তের এসব অপরাধীদের আটকের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার(১৭ সেপ্টম্বর) বিকালে তিনি বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য খালাস শেষে স্বর্ণেরবার নিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ট্রাক নিয়ে ঢুকলে (ট্রাক (ডব্লিউ বি ৭৮-৬০৬৪) সীমান্তরক্ষী বিএসএফ তাকে আটক করে স্বর্ণেরবার উদ্ধার করে।

উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বার দুইটি কালো টেপ দিয়ে সাদা কাগজে মোড়ানো অবস্থায় ট্রাকের কেবিনের ভিতর লুকানো ছিলো। যার মূল্য আনুমানিক সাড়ে ১৭ লক্ষ টাকা বলে বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

সীমান্ত সুত্রে জানা যায়, আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর-২৪ তারিখে ২১ হাজার কেজি আপেল নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। পণ্য চালানটির আমদানিকারক- ঢাকা বাণিজ্যলয়। এপারের সিএন্ডএফ ও ট্রান্সপোর্ট পণ্য চালান খালাস করে। ১৭ সেপ্টম্বর ভারতে ফেরার পথে ট্রাক থেকে স্বর্ণেরবার উদ্ধার করা হয়।

ভারতের ২৪ পরগনা সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের পাবলিক রিলেশন অফিসার ডিআইজি শ্রী এ কে আর্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণেরবারসহ পাচারকারীদের আটকের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, গ্রেফতারকৃত চোরাকারবারী ও জব্দকৃত সোনার বিস্কুট পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শুল্ক বিভাগ, পেট্রাপোলে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোনো অবস্থাতেই সীমান্তে চোরাচালান বা অন্য কোনো ধরনের অপরাধ ঘটতে দেবে না। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও ছাড় দেবে না বিএসএফ। চোরাচালান প্রতিরোধে সহযোগীতা কামণা করেণ বিএসএফ কর্মকর্তা।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভারতীয় ট্রাক চালকেরা বেনাপোল বন্দরে একটি চক্রের সাথে মিলিত হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সক্রিয় পাচার কাজে যুক্ত রয়েছে। তবে ওরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় পাচার অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাড়িয়েছে।

তিনি আরও জানান, বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি গেইটে স্ক্যানিং মেশিন অচল থাকায় প্রতিনিয়ত চক্রটি আরও জোরালোভাবে বাসা বেঁধেছে। ভারত সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা সর্বদা সজাগ থাকাই এখানে এসে মাঝে মধ্যে কিছু স্বর্ণের বার আটক হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে এ অবস্থা চলতে থাকলে আর এসকল অবৈধ সিন্ডিকেট চক্রদের রোধ করতে না পারলে দু’দেশের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে যাবে। মুল হোতাদের শনাক্ত করতে পারলেই পাচার রোধ সম্ভব হবে।

জানা যায়, বেনাপোল সীমান্তের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে স্বর্ণ পাচারের ‘গোল্ডেন রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। তবে, স্বর্ণ নিয়ে নির্বিঘ্নে বেনাপোল পার হয়ে গেলেও, পেট্রাপোলে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা।

এদিকে পাচার রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরো জোরালো পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশ কাস্টমসে এনিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। অভিযোগ উঠেছে এসব পাচারে কার্যক্রমে কাস্টমসের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে চোরাকারবারীদের সখ্যতা থাকতে পারে। যার কারনে স্ক্যানিং মেশিন মেরামত বা যাত্রীর ব্যাগেজ তল্লাশীতে অনিহা রয়েছে।

জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৪টি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে। এর একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশ দ্বারে। অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম।

এছাড়া বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেল স্টেশন আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন-কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে আরও ৩টিস্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। স্ক্যানিং মেশিনটি কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। তবে স্ক্যানিং মেশিনগুলোর মধ্যে ৩টি যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ায় গেল ৯ মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এপথে।

এতে অবাধে আমদানি পণ্য ও পাসপোর্ট যাত্রীর মাধ্যমে স্বর্ণ ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চোরাচালান ব্যাপক হারে বেড়েছে। এছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচলকারী পরিবহনের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালানে।

বেনাপোল কাস্টমসের পক্ষে স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ব্যবস্থাপক বনি আমিন জানান, স্ক্যানিং মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন। সেটি চুক্তি অনুযায়ী কাস্টমস ব্যয় বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্ক্যানিং মেশিন ৩টির কার্যক্রম বন্ধ আছে।

তথ্য অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে গত ৬ মাসে অবাধে যাত্রীর কখনো ট্রাক চালকের ছদ্দবেশে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে পাচারের সময় ৫৭ জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কেজির কাছাকাছি স্বর্ণেরবার উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় পাসপোঁর্টধারী, বাসচালক ও ট্রাক চালকসহ পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত অন্তত ৭০ জন স্বর্ণ চোরাচালানের মামলায় আটক হয়েছে। যার বেশির ভাগ ভারতীয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *