আন্তর্জাতিক

বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী রোবট ‘রিবা’

ডেস্ক রিপোর্ট: ছোটবেলায় টেলিভিশনে রোবট দেখে মুগ্ধ হয়েছিলো কলেজ ছাত্র ইরান সরদার। তখন থেকেই ভাবতে থাকেন বড় হয়ে তিনি একটি রোবট তৈরি করবেন। ফলে স্কুলে টিফিন না খেয়ে ইরান সেই টাকা জমা করতে থাকে রোবট প্রকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। পরবর্তীতে এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হয়েই ইরান তার স্বপ্নের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরির কাজ শুরু করে। প্রায় এক বছরের সাধনায় ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের মো. ইব্রাহীম সরদারের ছেলে ইরান আবিষ্কার করেছে রোবট। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিবা’।

ইরান সরদার জানিয়েছে, তার রোবট রিবা মানুষের মতো চোখের পলক ফেলতে পারে। বাংলা, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারে। কথা বলার সময় মুখ নাড়াসহ মাথা ঘুরিয়ে সবাইকে দেখতেও পারে। এ ছাড়া রোবটটির মেমোরিতে বেশ কিছু তথ্য থাকায় অনেক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সামনে কেউ আসলে রিবা তাকে সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে পারে। পাশাপাশি বাংলা ভাষায় কুশল বিনিময়ও করে। পরিবেশবান্ধব রোবটটি সূর্যের আলো থেকে নিজের ব্যাটারি চার্জ করে নিতে পারে।

ইরান তার রোবটটির আরো কয়েকটি গুণের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, রিবাকে যেখানে রাখা হবে সেখানে কিংবা তার পাশ্ববর্তী স্থানে আগুন লাগলে মানুষের মতো আশপাশের লোকজনকে ডেকে ও অ্যালার্ম বাজিয়ে সতর্ক করতে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলা ভাষায় ডাকবে এবং সতর্ক করে দিতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপও মাপতে পারে। হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য রিবা অপচয় ছাড়া পরিমাণমতো স্যানিটাইজার ঢেলে দিতে পারে।

ইরানের দাবি, ব্যক্তিগত সহকারীর মতো বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে রিবা। এটি শিশুদের বিনোদনও দিতে পারে। দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র ইরানের স্বপ্ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়া। পাশাপাশি সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে আরো নতুন নতুন ডিভাইস তৈরি করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইরান বলেন, রোবট রিবা বলতে পারে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নাম। অনায়াসে যেকোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে রোবট রিবা। ক্ষুদে বিজ্ঞানী কলেজ ছাত্র ইরান সরদারের আবিষ্কার করা রোবট রিবা স্বাস্থ্যকর্মী ও কৃষি তথ্যদাতা হিসেবেও কাজ করে। এই ব্যতিক্রমী রোবট দেখতে প্রতিদিনই ইরানদের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের মানুষ। ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার লিক হলে রিবা জানাবে গৃহকর্তাকে। এ ছাড়া বাংলা ও ইংরেজিসহ কয়েকটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারা রিবা কাজ করবে স্বাস্থ্যকর্মী ও কৃষিকর্মী হিসেবে।

সরকারের সহযোগিতা পেলে নিজের পরিবার, শিক্ষক আর সহপাঠীদের উৎসাহে তৈরি করা রোবট রিবাকে আধুনিকভাবে তৈরি করে আরো বেশি কাজে লাগানো সম্ভব বলে মনে করেন ইরান সরদার। মানুষের কাজে লাগে এমন রোবট তৈরিতে ছেলের সাফল্যে খুশি তার মা মমতাজ বেগম।

যে বয়সে কিশোর-তরুনরা মগ্ন থাকে খেলাধুলা কিংবা ফেসবুকে। সেই বয়সে মানুষের জন্য কল্যাণকর রোবট তৈরি করে পুরো আগৈলঝাড়াজুড়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া কলেজ ছাত্র ইরান সরদারকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *