কেমন হলো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
ডেস্ক রিপোর্ট: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ রোববার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবারের মনোনয়নে নতুন মুখ যেমন ছিল তেমনি আলোচিত অনেক সংসদ সদস্য নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। এবারের মনোনয়নে মন্ত্রী পরিষদে থাকা কোনো কোনো মন্ত্রী দল থেকে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত রোববার এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এতে কিছুটা ভাটা পড়ে, বিশেষ করে যারা মনোনয়ন পাননি তাদের কর্মী-সমর্থকরা হঠাৎই চুপ হয়ে যান। আর যারা মনোনয়ন পান তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা যায় বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ছিল আলোচনা। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে দলীয় কর্মীদের মধ্যে উঠে এসেছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া।
এবার নির্বাচনে বেশ কিছু আলোাচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য যে বাদ পড়বেন তা নিয়ে আগেই থেকে আলোচনা ছিল। এসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দখলসহ নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, অশ্লীল ফোনালাপের ঘটনায় সমালোচিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বরিশাল-৪ আসনে দুইবারের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, সাবেক আইজি ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সদস্য সদস্য নূর মোহাম্মদ, মানিকগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ও সাবেক ক্রিকেটার নাইমুর রহমান দুর্জয়, আলোচিত ব্যবসায়ী ও রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক, দুর্নীতির কারণে আলোচিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।
৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ৩৩৬২ জন। এর মধ্যে সাবেক আমলা, সাবেক আইজিপি, ডিআইজিসহ ব্যবসায়ীরা, চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীও ছিলেন। গেল নির্বাচনের চেয়ে এবার ৬৬১টি কম মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নের দৌড়ে বাদ পড়েছেন অনেকেই। সবচেয়ে বড় চমক এবারের বিগত জাতীয় সংসদের ৭১ জন সংসদ সদস্য মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাদ পড়া মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছে তিন প্রতিমন্ত্রী। এরা হলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংসদ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সাদেক খান, ডা. হাবিবে মিল্লাত, জয়া সেনগুপ্ত, সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ মোট ৭১ জন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যৗল্প দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
মনোনয়নে চমকের তালিকায় রয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, পিএসসির চেয়ারম্যান সাদেক খান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকা-৬ ও ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলের মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে বেশ আলোচনা ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছেন।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি চাপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে চেয়েছিলেন, মনোনয়ন পেতে বরিশাল-৩ আসন থেকে আবেদন করেছিলেন চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল থেকে, ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন প্রার্র্থী ছিলেন অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান, চিত্রনায়ক শাকিল খান। তবে এদের কেউই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি।
মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সুমনও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, যেহেতু নেত্রী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন, তাই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন তার ছেলে সুলাইমান সেলিম। নারায়নগঞ্জ সেলিম ওসমান ও কুষ্টিয়ায় হাসানুল হক ইনুর আসনে এখন পর্যন্ত কাউকে মনোনয়ন পাননি। অন্যদিকে ঢাকার ৮টি আসনে ৫টি আসনেই ছিল নতুন মুখ। এরা হলেন; আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সাইফুজ্জামান শেখরের মতো হেভীওয়েট প্রার্থীকে বাদ দিয়ে সাকিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নড়াইল ২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন গেল বারের আলোচিত সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার মাশরাফী।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের ৮টিতেই নতুন মুখ। এর পুলিশের বর্তমান আইজির ছোট ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।
ঢাকা-৮ আসনে রাশেদ খান মেননের একই আসনে আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাসিমও মনোনয়ন পেয়েছেন। এবারের প্রতিটি আসনে যেন প্রতিযোগিতা হয় তাই সব আসনেই যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, নির্বাচনের মনোনয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে রাজনীতির মাঠে কোনো কোনো ক্ষেত্রে খেলোয়াড় হায়ারও করতে হয়। এ বিষয়টিকে তিনি সাধুবাদ না জানালেও রাজনীতিটা রাজনীতিকদের হাতেই থাকা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।