সারাদেশ

ইবিতে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ক্লাসরুম সংকট: আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্ট: ইবিতে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ক্লাসরুম সংকট: আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ছবি: বার্তা ২৪

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উন্নয়ন অধ্যয়ন (ডিএস) বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে লাঞ্ছনা ও ক্লাসরুম সংকটের প্রতিবাদে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।

এসময় ‘ক্লাসরুম সংকট কেন? প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না,’ ‘ আমার শিক্ষক লাঞ্ছিত কেন? প্রশাসন জবাব চাই,’ সহ বিভিন্ন স্লোগান এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায় তাদের।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের অংশ রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবন সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এ সময় রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবনের আংশিক কাজ বাকি থাকায় বিভাগের সবাইকে আগামী ১ ঘণ্টার জন্য বের হয়ে যেতে বলা হয়। এসময় অবস্থানরত শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

এর প্রতিবাদে দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিভাগের প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগটি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করলে ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি মাত্র ক্লাসরুমে ক্লাস করে আসছিলো বিভাগটি। ফলে সময়মতো ক্লাস, পরীক্ষা নিতে না পারায় সেশন জটের সম্মুখীন হয় বিভাগটি।

উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে ২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী জেসিয়া বলেন ‘এই হাফিজ এইদিকে আসো, এই তালার চাবি কই পেয়েছো? তোমাকে ৭ বছর যাবৎ চিনি। তুমি কি করতে পারো করো। এক ঘণ্টার মধ্যেই তালা খুলে দাও এবং রুম ফাঁকা করো এভাবেই কথা বলেন স্যারের সাথে। তখন আমাদের পরীক্ষা শুরুর মাত্র এক ঘণ্টা হয়েছে। আমাদের সামনে স্যারকে কেন এইভাবে অপমান করা হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট জবাব চাই।’

অন্য শিক্ষার্থী ইয়াশ রোহান বলেন ‘আমরা ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইসলামিক স্টাডিজ পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। এমন সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ভিসি স্যার সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমাদের ক্লাস রুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়েন এবং আমাদের সামনেই পরিক্ষার হলে দায়িত্বরত স্যারকে লাঞ্চিত করেন এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই রুম ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের মেগা প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান আছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই আমাদের এই ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। তারপর ক্লাসরুমের কোনো সংকট থাকবে না। ক্লাসরুমের কাজ সম্পন্ন হলে তো তারাই পাবে এই কক্ষগুলো। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমি আগামীকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন, বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং কল করেছি। তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এর সমাধান করা হবে।

শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতারে নিষেধাজ্ঞায় জবিতে প্রতিবাদ মিছিল, প্রশাসনের বাধা!

ছবি: বার্তা২৪.কম

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিলের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী মিছিল ও মানববন্ধন বের করে। মিছিলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বাঁধা প্রদানের অভিযোগ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আসলে প্রক্টর মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে প্রক্টোরিয়াল বডি মিছিলের গতি রোধ করে। ফলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানেই মিছিলটি শেষ করতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান মাস একটি মহিমান্বিত মাস। রমজানে ইফতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকলে একসাথে ইফতার করলে ভ্রাতৃত্ব বন্ধ দৃঢ় হয় এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি উর্বর স্থানে ধর্মীয় অনুভূতিতে এমন নগ্ন হস্তক্ষেপ কখনো কাম্য নয়। অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাস চলাকালীন সময়ে ছাত্রলীগ মিছিল মিটিং করলে সেখানে কোনো অনুমতি লাগে না। অথচ আমরা সামান্য মিছিল বের করলেই প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের কঠোরভাবে বাঁধা প্রদান করে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছি, তবুও প্রশাসন আমাদের তা করতে দেয়নি।

এ বিষয়ে প্রক্টর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা তাদেরকে বাঁধা প্রদান করি নি। তাদের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা করেছি। ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দিলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। আমরা তাদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পেরে তাদের সাথে সেভাবেই আলোচনা করেছি। তারা আমাদের কথাগুলো ইতিবাচক ভাবে নিয়েছে এবং নিজ থেকেই তারা ব্যানার গুটিয়ে তাদের কর্মসূচি সেখানেই শেষ করেছে।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকল সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রক্টর অফিস থেকে অনুমতি নিতে হবে। যেহেতু তারা কোনো অনুমতি নেয়নি, তাই আমরা নিজ উদ্যোগে তাদের সাথে কথা বলেছি।

এর আগে গত সোমবার (১১ মার্চ) সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইদিনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ আলমগীর সরকার স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

উক্ত বিজ্ঞপ্তি দুটিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আসন্ন রমজান মাসে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।

;

সাংবাদিক শুনলে ব্যস্ততা বাড়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর

ছবি: সংগৃহীত

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) বিভিন্ন অবকাঠামোগত অনিয়ম, নির্মাণ ত্রুটি বা বাস্তবায়ন যে কোন ধরনের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাতে সাংবাদিককে এড়িয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী (চিফ ইঞ্জিনিয়ার) মোমেনুল এহসান।

২০২২ সালে প্রধান প্রকৌশলী অবসরে যাওয়ার পর থেকে এ পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। 

প্রকৌশল দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। সকল অবকাঠামো, কেনাকাটা, টেন্ডার, কাজের মান যাচাই সহ সার্বিক বিষয়গুলো এই বিভাগের অধিনেই হয়ে থাকে। এসব কাজে বিভিন্ন সময় অনিয়ম, দুর্নীতি, তদারকির অভাব, নিম্ন মানের কাজ, কাজ অসম্পূর্ণ রেখে টাকা ছাড় সহ বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠলেও এসব বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সংবাদের জন্য মন্তব্য নিতে তার রুমে গেলেও বেশির ভাগ সময় তাকে পাওয়া যায় না, আবার থাকলেও ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন না, করলেও পরে যোগাযোগ করতে বলেন।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মরত সকল সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এই প্রকৌশলী। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্বের পাশাপাশি পরিবহন পুলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি, সেখানেও একই অভিযোগ। কিছুদিন আগে দপ্তরটির বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তার সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য নিতে ব্যর্থ হয় শেকৃবির আমার সংবাদ পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি।

সাংবাদিক কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই ভেটেরিনারির ৫ কোটির হাসপাতালে শুধু গার্ডের বিষয়ে জানতে চেয়েও কোন মন্তব্য পায়নি দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি, নষ্ট লাইটের বিষয়ে ৩দিন রুম ও মুঠোফোনে যোগাযোগের পর ৪র্থ দিন মন্তব্য পেয়েছি বলে জানান প্রতিদিনের বাংলাদেশের ক্যাপাস প্রতিনিধি, সময় দিয়েও দেখা না করে অন্যদিক দিয়ে চলে যায় প্রধান প্রকৌশলী বলে জানান দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি, একই ধরনের বিড়াম্বনার কথা বলেন সমকাল সহ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মরত সাংবাদিকরা।

জানা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রয়ারিতে মেয়াদ শেষ হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমানের। এরপর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় এই প্রকৌশলীকে। তিনি একজন ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্বাহী প্রকৌশলীর (বিদ্যুৎ) দায়িত্বে ছিলেন।

প্রধান প্রকৌশলীর মেয়াদ শেষের পর দুইবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও এখনো চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে ব্যর্থ প্রশাসন। বর্তমানে এই বিভাগে দায়িত্বে থাকা ১০ জন প্রকৌশলীর মধ্যে ৫ জনই ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন একজন ডিপ্লোমা ডিগ্রির ব্যক্তি থাকার বিষয়ে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, প্রধান প্রকৌশলীর পদে একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী দায়িত্বে থাকায় কমেছে কর্মদক্ষতা, বাড়ছে নিম্নমানের কাজ।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রধান প্রকৌশলের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো। পরে কবে, কাল নাকি পরশু ? এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোন দিবেন বলে জানান, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর কথা বলেন নি।

প্রধান প্রকৌশলীর এমন আচারণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, এরকম তো হওয়ার কথা না আমি বিষয়টা দেখবো, এখানে তো তথ্য গোপনের কিছু নেই আর খুব দ্রুত চীফ ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ সম্পন্ন হবে।

;

জাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি

ছবি: বার্তা২৪.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডে ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি আরম্ভ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (১১ মার্চ) সকালে প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশপথের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে অবস্থান করতে লক্ষ্য করা যায়।

আন্দোলনকারীদের অন্য দাবিগুলো হলো- ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি, নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের (জনি) বহিষ্কারাদেশের প্রজ্ঞাপন জারি ও অফিস আদেশ প্রণয়ন করতে হবে এবং ইতিপূর্বে যৌন নিপীড়ন সেলে উত্থাপিত সব অমীমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রশাসনিক ভবনে অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিন আন্দোলনের সমর্থনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল বলেন, আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিতে। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো উপস্থাপন করেছি। আমরা আশা করেছিলাম গতকালের সিন্ডিকেট সভায় আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু রোববার সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য আমাদের কিছু না জানিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে চলে যান। পরে বাধ্য হয়ে আমরা দাবি আদায়ে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছি।

অবরোধকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিব জামান বলেন, মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট এবং প্রক্টরের ব্যাপারে গত পরশু একটা অভিযোগপত্র দিয়েছি। যে নিপীড়নের কারণে একজন শিক্ষককে (মাহমুদুর রহমান) বরখাস্ত করা হয়েছে, সেই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ রয়েছে প্রক্টরের বিরুদ্ধে। তারপরও প্রক্টরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, প্রশাসন বারবার ব্যর্থ হয়েছে তাদের কথা রাখতে। এখন পর্যন্ত তারা অছাত্রদের হল থেকে বের করতে পারেনি, তারা বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের আই ওয়াশ করছে।

এর আগে গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা না বলে পেছনের দরজা দিয়ে তার প্রস্থান করে ভিসি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’র আন্দোলনকারীদের পক্ষে সংগঠক অধ্যাপক পারভীন জলি এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।

সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় ধর্ষণকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রক্টর ও প্রভোস্টের অপসারণ, অছাত্রদের হল ত্যাগ, শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মাঝখানের দেয়াল অপসারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো জানতে সভা শুরুর পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন আন্দোলনকারী ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভা শেষ হয়েছে জানতে পেরে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়ি দিয়ে উপাচার্যের কক্ষের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় উপাচার্য সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে লিফট ব্যবহার করে নিচে নেমে পেছনের ফটক দিয়ে প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করেন। এসময় তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারীকেও রেখে চলে যান।

প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয় জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন।

ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের ও তাদের সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

;

নারীরা না থাকলে সিভিলাইজেশন হতো না: জবি উপাচার্য

নারীরা না থাকলে সিভিলাইজেশন হতো না: জবি উপাচার্য

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেছেন, ‘হিস্ট্রি কেবল পুরুষরা ক্রিয়েট করেনি। হিস্ট্রি ক্রিয়েট করেছে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে। নারীরা না থাকলে সিভিলাইজেশন হতো না। কিন্তু বিভিন্ন বইয়ে উল্লেখ আছে হিস্ট্রি ইজ ক্রিয়েটেড বাই ম্যান; যার মাধ্যমে নারীদের অবদানকে পরিকল্পিতভাবে চাপা দেয়া হয়েছে।’

সোমবার (১১ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ‘একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ ভাস্কর্য চত্বরে সকাল ১১ টায় এ অনুষ্ঠিত শুরু হয়।

উপাচার্য বলেন, নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘গিভ মি এন এডুকেটেড মাদার, আই উইল গিভ ইউ এন এডুকেটেড নেশন।’ কিন্তু আমরা এই আর্গুমেন্ট মানি না। কারণ, এই ধারণা অনুযায়ী নারীরা শুধু মা হবে, বউ হবে, বোন হবে, মেয়ে হবে। এর বাইরেও যে নারীরা মানুষ সেটা মানা হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমাকে যদি আরেকবার জন্ম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে আমি নারী হয়েই জন্মাবো। বায়োলজিক্যাল পুরুষ এক রকম, নারী এক রকম। তার মানে এই নয় যে, আপনি নারীকে নির্যাতন করবেন, নারীকে বঞ্চিত করবেন, তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন। এটা হতে পারে না।

জিডিপিতে নারীর অবদান উল্লেখ করে উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম বলেন, বর্তমান জিডিপিতে নারীর অবদান ২০ শতাংশ। কিন্তু নারী গৃহে যে কাজ করে কাপড় ধোয়া, আয়রন করা, রান্না করা, চা বানানো, শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা করা এগুলোকে যদি স্যাটেলাইট কাউন্টিংয়ে আনা হয় তবে জিডিপিতে তার পরিমাণ হবে ৪৮ শতাংশ।

বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বলেন, এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী নারীতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রগতি ত্বরান্বিত হবে। নারীতে বিনিয়োগযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-নারীর সমতা, সক্ষমতা ও সুযোগের গুরুত্ব দেয়া। পৃথিবীতে একমাত্র নারীতে বিনিয়োগ কখনও বিফলে যায় না। আবার শুধু নারীতে বিনিয়োগ করলেই হবে না, পুরুষও বিনিয়োগ করতে হবে। আর এভাবেই বিনিয়োগের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান।

আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উক্ত অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ এবং শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন। এছাড়াও অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমাজকর্ম বিভাগের ড. বুশরা জামান ও সংগীত বিভাগের মাহমুদুল হাসান।

অনুষ্ঠানের ২য় পর্যায়ে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক প্রতিনিধি এবং কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *