আন্তর্জাতিক

জাবিতে ৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ, স্থবির প্রশাসনিক কার্যক্রম

ডেস্ক রিপোর্ট: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে এক বহিরাগত ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ও সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আন্দোলনকারীরা।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ শুরু করে বিকেল ৪টায় দ্বিতীয় দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে অবস্থান করতে লক্ষ্য করা যায়।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো- নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া, গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি ও দাফতরিক আদেশ প্রণয়ন করতে হবে এবং ইতিপূর্ব যৌন নিপীড়ন সেলে উত্থাপিত সব অমীমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা, মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এসময় আন্দোলনকারীদের মধ্যে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামান বলেন, আমাদের দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। গতকাল সারা দিন আমরা অবরোধ করেছি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে কেউ আসেনি। তারা যে দায়িত্বহীন, এর মাধ্যমে সেই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উপাচার্য আমাদের এতদিন মিথ্যা বলে এখন আমাদের সামনে আসতেও লজ্জা পাচ্ছেন।

অবরোধ কর্মসূচি শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’র সদস্য-সচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তিনি ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তদন্ত করবেন। কিন্তু সে কথা তিনি রাখেননি। উল্টো মিটিং শেষে পালিয়ে গেছেন। এর প্রেক্ষিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে।

মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত সবাইকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব, চালিয়ে যাবো। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আন্দোলনকারীদের সাথে বসে কথা বলবেন জানিয়েছন। তখন তার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব।

এদিকে ২ দিন ধরে দিনব্যাপী প্রশাসনিক ভবন অবরোধের কারণে নিজ কার্যালয়ে আসেননি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের কার্যালয়ে দুইদিন ধরে প্রবেশ করতে না পারায় সোমবার (১১ মার্চ) থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্যের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায় নি।

এর আগে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা না বলে পেছনের দরজা দিয়ে তার প্রস্থানের ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’র আন্দোলনকারীদের পক্ষে সংগঠক অধ্যাপক পারভীন জলি এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।

সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় ধর্ষণকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রক্টর ও প্রভোস্টের অপসারণ, অছাত্রদের হল ত্যাগ, শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মাঝখানের দেয়াল অপসারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন।

ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের ও তাদের সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *