সারাদেশ

জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ থেকে যা জানালেন এক নাবিক

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর একজন নাবিকের স্বজনের কাছে পাঠানো কিছু ভয়েস মেসেজ বার্তা২৪.কমের হাতে এসেছে। সেখানে ওই নাবিককে ভীতসন্তস্ত্র গলায় বলতে শোনা যায়, ‘ওরা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি বাথরুম থেকে ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছি। দোয়া করিয়েন। ওরা ৭-৮ জন আছে। তাদের সবার কাছেই অস্ত্র আছে।’

মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক আছেন। ধারনা করা হচ্ছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলেই পড়েছে জাহাজটি। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা ১টায় জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে গ্রুপটি।

মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ওই জাহাজে আগে কর্মরত আরমান হোসেন বাবু নামের আরেক নাবিকের কাছে কয়েকটি ভয়েস মেসেজ পাঠান জলদস্যুদের হাতে অবরুদ্ধ জাহাজের এক নাবিক। তবে ওই নাবিকের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। আরমান হোসেন একই মালিকের আরেকটি জাহাজে কর্মরত আছেন।

আরমান হোসেন দেশে স্বজনদের কাছে ভয়েস মেসেজগুলো পাঠিয়েছেন। ওই ভয়েস মেসেজে অবরুদ্ধ নাবিককে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমরা মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের পথে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে জলদস্যুদের কবলে পড়েছি। ওরা (জলদস্যু) দুই মাস আগে একটি ইরানি ফিশিং বোট আটক করেছিল। সেটি আমাদের জাহাজের সঙ্গে বাঁধা আছে। ফিশিং বোট থেকেই মূলত আমাদের ওপর ওরা আক্রমণ করেছে। ওরা ফিশিং বোটটি ছেড়ে দেবে হয়তো। আমরা সেটিতে ডিজেল দিলাম। জ্বালানি দেওয়া শেষ হলে হয়তো ওই ফিশিং বোটটি ছেড়ে দেবে।’

এরপর একরাশ হতাশা নিয়ে ওই নাবিক বলেন, ‘এরপর হয়তো জলদস্যুরা আমাদের সোমালিয়ান উপকূলে তাদের আস্তানায় নিয়ে যাবে। আমরা অফিসে জানিয়েছি। সবাই দোয়া করিয়েন আমাদের জন্য।’

জাহাজের ২৩ নাবিকই নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম। তিনি বলেন, জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজের ২৩ জন নাবিক নিরাপদে আছেন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

জাহাজটিতে থাকা বাংলাদেশি নাবিকদের নামের তালিকা এমভি আবদুল্লাহর নামের জাহাজটি গত বছর সংগ্রহ করে কেএসআরএম গ্রুপ। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটি লম্বায় ১৯০ মিটার। কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর সাধারণ পণ্য পরিবহন করে আসছিল জাহাজটি।

এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ সময় পরেও জাহাজের মালিক পক্ষ ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন এবং নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন। ধারণা করা হচ্ছে জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এখন জাহাজটিকে সোমালিয়া বন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে করছি। তবে বেশ কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত জলদস্যুদের পক্ষ থেকে জাহাজ মালিকের সঙ্গে কোনো প্রকারের যোগাযোগ করা হয়নি বা কোনো দাবি জানানো হয়নি। হয়তো জলদস্যুরা জাহাজকে তাদের বন্দরের কাছে নিয়ে গিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবি জানাবে।

২৩ নাবিকসহ সোমালি জলদস্যুদের হাতে আটক বাংলাদেশি জাহাজ জাহাজটিতে যারা আছেন

জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটিতে আছেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে। এছাড় নোয়াখালীর আছেন দুজন। বাকি নাবিকেরা বাকিরা ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বরিশালের।

এর আগে, ২০১০ সালে একই মালিকানাধীন এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। তখন মালিক পক্ষের উদ্যোগে ৩ মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়েছিল।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *