আন্তর্জাতিক

রাজনৈতিক অস্থিরতায় নাজুক অর্থনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট: এমনিতেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। করোনা পরবর্তী দূরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ও খাদ্যসশ্যের মূল্য বেড়ে অর্থনীতিতে যে আঘাত এসেছে, তাতে সাধারণ মানুষের জীবন হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে দিনে দিনে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ যখন কমতে শুরু করেছে তখনই আবার নতুন যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। হঠাৎ করেই গত ২৮ অক্টোবর থেকে উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।

বিএনপি ও এর সমমনাদলগুলো ২৯ অক্টোবর হরতাল কর্মসূচি পালন করে। এরপর থেকে পালিত হয় টানা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি। আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে আরো ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ। এক হিসাব থেকে জানা যায়, একদিনের হরতাল কিংবা অবরোধে ক্ষতি হয় ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল্যস্ফীতির চাপে ও ডলারের সংকটের কারণে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। টাকার মান কমতে থাকায় আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ডলার সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ের গতি শ্লথ হয়ে আছে। ব্যবসা ভালো না হলে রাজস্ব আদায়েও প্রভাব পড়বে। আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য যদি পূরণ না হয় তাহলে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি না নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যাবে।

নিত্যপণ্যের দাম এমনিতেই চড়া। অবরোধের কারণে পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। পেঁয়াজ ও আলুর দামে  আগে থেকেই ঊর্ধ্বগতি। বড় বড় শপিং মলগুলোতে বেচাকেনা নেই, একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে তারকা হোটেলগুলোতে। কেনাকাটা কমে গেলে নগদ অর্থের প্রবাহ কমে যায়। সেই সাথে খেলাপি ঋণের পরিমান এই সময় বেড়ে যাবে। বর্তমানে অর্থের তারল্য সংকট চলছে। এরপর খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হবে। 

আরও পড়ুন: আরো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কি বার্তা দিচ্ছে

এক হিসাব থেকে জানা গেছে, তিন দিনের অবরোধে শুধুমাত্র কক্সবাজারে পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে এই পর্যটন শিল্পখাতে জড়িত হাজার হাজার মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়বে। 

বর্তমানে অর্থনীতির নাজুক অবস্থা চলছে। এর ওপর রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য আরো নেতিবাচক হবে। হরতাল অবরোধ যদি আরো দীর্ঘ হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণে বাড়বে এবং এই অবস্থা থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে যাবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ধরনের অস্থিরতা চলতে থাকলে তা নতুন বিনিয়োগের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে আসবে। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে চাইবে না।

এমনতিতেই আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দ্বিতীয় কিস্তি পেতে পাওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। শর্তগুলো ছিল সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ রিজার্ভ অন্তত ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার থাকা এবং অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় অন্তত ৬১ হাজার কোটি হতে হবে। এই শর্তের একটিও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় আরো অনিশ্চিত দেশের অর্থনীতি।

অবরোধের সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রকিকদের আন্দোলন নতুন অনুসঙ্গ হয়ে এসেছে। যে মুহূর্তে দেশের রিজার্ভ কমছে, সেই সময়ে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে আসা বৈদেশিক মূদ্রা অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে বড় ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু চলমান শ্রমিক আন্দোলন সময়মতো পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। 

সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধ অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হানছে। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। সেক্ষেত্রে কল-কারখানা না চললে আমদানি-রপ্তানি যেমন ব্যাহত হবে, সেই সঙ্গে সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তির সংকটও তৈরি হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে সহিঞ্চুতার কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতির ক্ষতি এড়াতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। নতুবা চলমান অবস্থা মানুষের কর্মসংস্থান ব্যাহত করবে, এতে করে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হবেন। 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *