সারাদেশ

জিম্মি করা ফিশিং বোট দিয়েই বাংলাদেশি জাহাজ জিম্মি

ডেস্ক রিপোর্ট: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি ভালো ফলন হওয়াতে কৃষকদের মরিচ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়াও কাঁচা মরিচের দাম তুলনামূলকভাবে ভালো পাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে মরিচের ব্যাপক চাহিদা থাকায় মরিচ চাষে ঝুঁকছেন উপজেলার কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার ৪১ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। বিপরীতে মরিচ পাওয়া যায় ২৫ থেকে ৩০ মণ। রমজানে বাজারে কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা থাকে এতে লাভের প্রত্যাশা করছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বাতশিরি গ্রামের কৃষক আবু ইউছুফ, একরাম উদ্দিন, মহিন উদ্দিন নুরুল ইসলাম ও ইদ্রিস মরিচের জমিতে যত্ন ও মরিচ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। রোজায় মরিচের চাহিদা বেশি থাকায় দম ফেলানোর ফুরসত নেই তাদের। পাশাপাশি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে মাঠে এসে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষক আবু ইউসুফ জানান, রমজান মাসে মরিচের চাহিদা থাকায় পাইকারী কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। 

মহিন উদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মরিচ চাষ শুরু করেছিলাম। অনেক ভালো ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকবার বাজারে বিক্রি করেছি। আমার ৩৬ শতক জমি রয়েছে রমজানের শেষ অব্দি মরিচ বিক্রি করা যাবে।  

আমির হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। শুধুমাত্র আমার না, উপজেলার সকল কৃষকদের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদাও আছে, যে টাকা খরচ হয়েছে ইতিমধ্যে তা উঠে গেছে। এখন লাভের অপেক্ষায় আছি।

তিনি বলন, কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী চাষাবাদ করেছি। এতে আমাদেরই লাভ হয়েছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যমতে, উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বাতশিরি গ্রামের কৃষক মো. মহিন উদ্দিন ৩৬ শতক, মো. একরাম উদ্দিন ২০ শতক, মো. সাইফুল ইসলাম ২৫ শতক, মো. আবু ইউসুফ ১৫ শতক, নূরুল ইসলাম ১৮ শতক, মো. ইদ্রিস ১৫ শতক, পূর্বচন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের নয়ানপুর গ্রামের কষক জাহাঙ্গীর আলম ১৫ শতক, একই গ্রামের কৃষক আবু সুফিয়ান ২০ শতক, জায়লস্কর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন মাসুদ ২৫ শতক খুশিপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন ১৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন।

এছাড়াও সিন্দুপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক আবদুল নবী ৫০ শতক, একই গ্রামে কৃষক আবদুর রহমান ২০ শতক, মাতুভূঞা ইউনিয়নের মারিজপুর গ্রামের কৃষক শামসুল হক ৫ শতক, একই গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন ৫ শতক, রামনগর ইউনিয়নের সেকান্দরপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান ২০ শতক, একই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান ২০ শতক, ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামরে কৃষক নূর ইসলাম ৪ শতক, একই গ্রামের কৃষক আমির হোসেন ৬ শতক, সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম ৩৩ শতক, পৌর এলাকার উত্তর শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক শিমুল চন্দ্র দাস ১০ শতক ও জগতপুর গ্রামের কৃষক মো. সোহাগ ৬ শতক জমিতে মরিচ চাষ করছেন।

উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জমিগুলো নিজেরা গিয়ে দেখছি, যখন যেটি প্রয়োজন আমরা সরবরাহ করছি। প্রতিটি ইউনিয়নব্যাপী আমরা পরিদর্শন করেছি। এবার মরিচ চাষে কৃষকদের লাভ হচ্ছে। সরকারি পরামর্শ অনুযায়ী আগামীতেও চাষাবাদ অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি।

দাগনভুঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, কাঁচা মরিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা ফসল। সারাবছর চাহিদা থাকলেও রমজান মাসে মরিচের চাহিদা অধিকহারে বৃদ্ধি পায়, তাই রমজান মাসকে সামনে রেখে আগে থেকেই অত্র উপজেলায় হাইব্রিড জাতের মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা মরিচ আবাদ করেছেন। এতে করে বাজারে মরিচের চাহিদা পূরণ হবে এবং কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

তিনি বলেন, দাম ভাল থাকার কারণে উপজেলায় মরিচ চাষে কৃষকরা বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় সুলভমূল্যে বাজারে মরিচ পাওয়া যাবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *