সারাদেশ

বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে যে তথ্য দিল আবহাওয়া অফিস

ডেস্ক রিপোর্ট: সোমালিয়ান দস্যুদের কবলে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকদের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে তা অনিশ্চয়তায় রয়েছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে একজন হচ্ছেন ফেনীর দাগনভূঞার ইব্রাহিম খলিল উল্ল্যাহ বিপ্লব। তিনি জাহাজের ইলেক্ট্রিশিয়ান ছিলেন। তিনি দাগনভূঞার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামের আবুল হোসেনের বড় ছেলে।

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও জলদস্যুদের হাতে জিম্মি সদস্যদের পরিবারে বিরাজ করছে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তাকে ফেরত পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছে তার পরিবার।

ইব্রাহিম ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেছিলেন। তার দুই ছেলে রেদওয়ান বিন ইব্রাহিম ও রিহান বিন ইব্রাহিম এবং স্ত্রী উম্মে সালমা সোনিয়া। তার পরিবার ফেনী শহরে নাজির রোডে বাসা ভাড়া করে থাকেন।

গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটে বাবা আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হয় বিপ্লবের। বাবাকে ফোন করে দোয়া চেয়েছেন ইব্রাহিম, বলেছেন বেঁচে থাকলে দেখা হবে।

ইব্রাহিমের বাবা বলেন, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটের দিকে আমার ছেলে ফোনকলে এ ঘটনা জানিয়েছিল। সে বলেছে, জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ আটক করেছে। আমার একটি মোবাইল তারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এটি লুকিয়ে রেখে বাথরুমে এসে কল দিয়েছি। বেশি কথা বলতে পারছি না। এটাই হয়তো শেষ কথা। আব্বু বেঁচে থাকলে দেখা হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

ইব্রাহিমের স্ত্রী উম্মে সালমা সোনিয়া বলেন, তার সাথে সর্বশেষ বুধবার সকাল দশটায় কথা হয়েছে। তিনি বলেন, বিপ্লব জানিয়েছে তারা নিরাপদে আছে। ব্যাগে থাকা একটি নষ্ট মোবাইল দিয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করছে বিল্পব। তার হাতে থাকা মোবাইলটি জলদস্যুরা কেড়ে নিয়েছে। বিপ্লব জানিয়েছে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের। জলদস্যুরা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে না। এসময় দুই ছেলেকে দেখে রাখতে বলেছেন বিপ্লব।

তিনি বলেন, এই ঘটনা শোনার পর থেকে আমার দুই ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমার স্বামীকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং জাহাজ মালিকপক্ষের কাছে আবেদন করছি।

ইব্রাহিমের বড় ছেলে রেদোয়ান বিন ইব্রাহিম বলেন, রাতে আব্বুর সাথে কথা হয়েছিল। তখন আমাকে দুষ্টামি না করে মায়ের কথামতো চলতে বলেছেন। বাড়িতে আসার সময় আমার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে বলেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবুল হোসেনের চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বিপ্লব সবার বড়। ৮ বছর আগে তিনি জাহাজের চাকরিতে যান। গত চার মাস আগে বাড়িতে এসে একমাস ছুটি কাটিয়ে আবারো জীবিকার তাগিদে জাহাজে যান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইমাম উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ওই বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েছি। বিপ্লবের বাবা আবুল হোসেন সন্তানের জন্য কান্নাকাটি করছেন।

এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা বলেন, ইতোমধ্যে বিপ্লবের বিষয়টি অবগত হয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসিম জানান, খবর পেয়ে তার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি খোঁজ নেওয়ার জন্য। বিপ্লবের পরিবারের লোকজনও যোগাযোগ করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটির নিয়ন্ত্রণে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। জাহাজে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *