সারাদেশ

৩৫১ কোটি ব্যয়ে সার কিনছে সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট: জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৪ সোমবার (১১ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইলিশ হলো মাছের রাজা, জাটকা ধরলে হবে সাজা’। এ উপলক্ষে চাঁদপুরের মোলহেড বড় স্টেশন এলাকায় জনসভা ও তৎসংলগ্ন নদীতে সচেতনতামূলক নৌ-র‍্যালির আয়োজন করে মৎস্য অধিদপ্তর। ঢাকা থেকে লঞ্চে করে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চাঁদপুর যান মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। ফেরার পথে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্ত আলাপে মন্ত্রণালয় নিয়ে তাঁর বিশদ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।

একান্ত আলাপে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী কথা বলেন মৎস্যজীবিদের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানে নেয়া তার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে। এ সময় তিনি মৎস্যজীবীদের ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া, অবৈধ জাল ব্যবহারে কঠোর হওয়া ও উৎস্যমূল বন্ধ করা, মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্মার্ট পদক্ষেপ নেয়াসহ মৎস্যজীবীদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। 

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বার্তা২৪.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রুহুল আমিন।

বার্তা২৪.কম: মৎস্যজীবীদের ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে সহজেই যেন ঋণ পায় তা নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

আব্দুর রহমান: এই বিষয়টা আমাদের এক ধরণের রোগ। যারা যেখানে দায়িত্ব পালন করেন সেখানে অবহেলা সাংঘাতিক খারাপ। আমরা চিন্তা করছি বাংলাদেশ ব্যাংকের  সঙ্গে বসব, আলোচনা করব। ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে চাষি যদি তার বাড়ির আশপাশের পুকুরে বা নালায় মাছ চাষ করতে চান সে ক্ষেত্রে যদি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে কনভিন্স করতে পারি এবং তারা যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে দুটো বিষয় হবে। একটা হলো আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, দ্বিতীয়ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। লাখি লাখ বেকার-যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। এটা বিরাট সম্ভাবনাময় খাত।

বার্তা২৪.কম: আপনাদের এবারের নির্বাচনি প্রতিজ্ঞা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ। সে ক্ষেত্রে আপনি মৎস্যখাতকে কিভাবে স্মার্ট করতে চান?

আব্দুর রহমান: স্মার্ট মৎস্য খাত করার লক্ষ্য একটাই, মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। সে উৎপাদন বৃদ্ধি করার যথেষ্ট উপাদান আমাদের আছে। আমাদের দেশে নালা, খাল, নদ-নদী, আবদ্ধ জলাশয়, পুকুরকে মাছ চাষের উপযোগি করে তোলা এবং সেগুলোকে সংস্কার করা জরুরি। এভাবে যদি আমরা মাছ চাষে উদ্যোগী হই তাহলে অবশ্যই সেখান থেকে আমরা একটা ভাল ফলাফল পাব।

বার্তা২৪.কম: মৎস্য রপ্তানি বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে কি ধরণের পদক্ষেপ নিবেন?

আব্দুর রহমান: মৎস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা মূলত চিংড়ি রপ্তানি করে থাকি। ইতোমধ্যে আমরা ভেনামি নামের নতুন একটি চিংড়ির জাত চাষ শুরু করতে নানা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এর উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণ চিংড়ির চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি। আমরা যদি সেখানে যেতে পারি ইনশাআল্লাহ চিংড়ি ও ইলিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সন্তোষজনক করা সম্ভব। আমাদের জিডিপিতে এই খাতটা অনেক বড় ভূমিকা পালন  করবে।

বার্তা২৪.কম: বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশ বড় একটি ভূমিকা পালন করে। এ ইলিশ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে কি ধরণের পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাব?

আব্দুর রহমান: ইলিশ মূলত একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এটা চাষাবাদের বা লালন পালন করার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং একটা মাছ থেকে একশটা বাচ্চা তৈরিই হলো ইলিশ উৎপাদনের মূল কৌশল। সে জায়গাটাতে যদি প্রটেকশন দেয়া যায় তাহলে নিশ্চয় উৎপাদন বাড়তে বাধ্য। পোনা বা জাটকা ধরা যদি বন্ধ করতে পারি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নানা ধরনের উৎসাহ, প্রণোদনা দিয়ে যদি এ কাজটা সফলভাবে করা যায় তাহলে আমি মনে করি একটি অভূতপূর্ব ফলাফল আমরা পাব।

বার্তা২৪.কম: মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৎস্যজীবীদের যে সহযোগিতা দেয়া হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত জেলেদের কাছে পৌছায় না। সে ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের এর সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে ? 

আব্দুর রহমান: আপনারা দেখবেন, এ খাতের সঙ্গে মহাজন বা দাদনদারদের যুক্ততা আছে। এরা অফ সিজনে জেলেদের অল্প টাকা দিয়ে তাদের আগাম কিনে নেয়। তারপর এরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে। এই সংস্কৃতিটা কিন্তু আমাদের দেশে নতুন নয়।

এই ভূমিকাটা একেবারে নির্মূল করা যাবে বলে আমি মনে করি না। প্রকৃত অর্থে যারা মৎস্যজীবী, যারা মাছ আহরণ করে তাদের তালিকাটা যদি স্মার্টলি প্রণয়ন করা যায়, সরকারের কৃষি ব্যাংকগুলো যদি তাদেরকে একটা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ দেয় তাহলে ঐ দাদন গোষ্ঠি বিলুপ্ত হতে বাধ্য।

বার্তা২৪.কম: অবৈধ জাল উৎপাদনকারীদের নির্মূলে কি ব্যবস্থা নিবেন?

আব্দুর রহমান: আইনি সহায়তা দিয়ে শুধু অবৈধ জাল নিধন করা কি সম্ভব? এই জাল নিধন করবে কারা? প্রশাসনের লোকজন। আমি প্রশাসনকে আন্তরিকভাবে দেখার জন্য বললাম কিন্তু তারা কম মনোযোগ দিয়ে দেখল, তাহলে তো হবে না। তবে কোন জিনিস বিনা বাধায় যদি কেউ করবার সুযোগ পায় তাহলে সে যে সুবিধাটা পাবে কিন্তু নানা ভাবে যদি প্রতিবন্ধকতা আসে, নানাভাবে যদি তাকে সতর্ক রাখা যায় তাহলে কিন্তু সে কাজটা সে ততটা সহজভাবে করতে পারবে না।

আমি একটা উদ্যোগ গ্রহণ করে যদি ৮০ ভাগও ফল পাই তাহলে তো এটা যথেষ্ট ভাল। কিন্তু আমার প্রেশার টা রাখতে হবে শতভাগ ফল পাবার। হয়তো আমি ২০ শতাংশ হলো না তারপরেও একটা ভাল ফল পাবো। আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি হচ্ছে, যদি মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট না থাকে তাহলে এটা খুবই কঠিন। কারণ উৎস্যমুখে যেখানে হানা দিতে বললাম, অবৈধ জাল নির্মূল করতে বললাম তারাও তো দাগি লোভী ব্যবসায়ী।

বার্তা২৪.কম: অভিযোগ আছে অনেক ক্ষেত্রেই জাটকা ধরার ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহার করা হয়। এর সাথে স্থানীয় সরকারের লোকজনও জড়িত থাকার কথা শোনা যায়। এ ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নিবেন?

আব্দুর রহমান: স্থানীয় সরকারের লোকজনকেতো জড়িত করতেই হবে। তবে হতাশার জায়গাটা হলো ঐখানেই যে আপনি তাদের আন্তরিকতা, তাদের স্বদিচ্ছা কতটুকু কোথায় আছে এই জায়গাটা তো বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজনে শিশুদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে না দিয়ে তাদের বোঝাতে হবে, তোমাদের যারা ব্যবহার করছে তুমি যেনো ব্যবহার না হও সে জন্যই এই শাস্তি।

বার্তা২৪.কম: আপনি ছাত্রলীগ থেকে এখন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরামে আছেন। কিন্তু এবারই প্রথম মন্ত্রী হয়েছেন। এনিয়ে আপনার অনুভূতি কি?

আব্দুর রহমান: রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে এটা একটা বড় স্বীকৃতি। দলের জায়গা থেকেও একটা কাজ করার বড় সুযোগ আছে। আবার দল সরকার পরিচালনায় থাকলে সেখানেও। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর সরকারে। এটার একটা ইতিবাচক সন্তুষ্টি তো থাকেই। যথার্থ অর্থে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, এমন সুযোগ পেয়ে মানুষের কল্যাণে এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোই হচ্ছে বড় কর্ম। সে কর্মটাই যদি সফলভাবে, সুন্দরভাবে করা যায় সেটাই বড় প্রাপ্তি।

বার্তা২৪.কম: সরকারের অংশ হিসেবে আপনার মন্ত্রণালয় নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? 

আব্দুর রহমান: মৎস্য মন্ত্রণালয় গণমানুষভিত্তিক মন্ত্রণালয়। আমাদের সামগ্রিক জনগোষ্ঠির দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত এই মন্ত্রণালয়। আমিষ জাতীয় খাদ্য স্বয়সম্পূর্ণভাবে মানুষকে দেয়া এবং নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে যেন রপ্তানিও করতে পারি সেটাই আমাদের পরিকল্পনা।

বার্তা২৪.কম: আপনার এই নতুন দায়িত্বকে কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?

আব্দুর রহমান: চ্যালেঞ্জ তো প্রত্যেকটা কাজেই আছে। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা, সেটিকে প্রোডাক্টিভ ভিউজ থেকে মানুষের সামনে তুলে ধরা, মানুষের জন্য কাজে লাগানোতেই স্বার্থকতা। কোন মানুষ যদি তার কাছে নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে এগুলো নিয়ে কাজ করতে চায় তাহলে সফলতা আসতে বাধ্য। আমার বিশ্বাস আমার সে ধরণের প্রবণতা, ইচ্ছা আছে। আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার যে ইচ্ছা সেটাই হচ্ছে বড় বিষয়। সে ইচ্ছেটা আমার মধ্যে আছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *