নওগাঁয় ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৬৫জন
ডেস্ক রিপোর্ট: ‘আমার বাবা ভিক্ষা করতো, আর মা রাজমিস্ত্রীর কাজ। সংসারে খুব অভাব থাকায় বাবা-মা রেখে দেয় আমাকে এতিমখানায়। সেখানেই থাকতাম আমি। হঠাৎ একদিন আমার বাবা মারা যায়। পরে আমার মা বিয়ে করে চলে যায় অন্যত্র। চিন্তায় ভেঙে পড়ি আমি। কী হবে আমার, কে দেখবে আমাকে।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. হাসানুর রহমান (১৯)।
শুধু হাসানুর রহমান নন, কুড়িগ্রামে আরও ৫১ জন নারী-পুরুষের চাকরি হয়েছে কনস্টেবল পদে। তারাও সবাই অনেক খুশি।
হাসানুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরি কে না পেতে চায়, সবাই চায়। যার কপালে চাকরি থাকে তার হয়ে যায়। কী যে ভালো লাগছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমার যে পুলিশে চাকরি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর থেকে এতিমখানায় লালিত-পালিত হয়েছি।
শুধু আমি না, আমার বড় বোনও সেখানে মানুষ হয়েছে। আজ যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতো, কতই না আনন্দিত হতো।
হাসানুর রহমান কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সুখাতি বোর্ড ঘর এলাকার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি নাগেশ্বরী পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার গোলাপ খাঁ শিশু শোধন কেন্দ্রে (এতিমখানা) বড় হয়েছেন। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর হাসানুর রহমান কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদনও করেছেন। এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে হাসানুর দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন তিনি।
গোলাপ খাঁ শিশু শোধন কেন্দ্রের সমন্বয়ক সব্যসাচী সাহা বলেন, আমি এই এতিমখানার জন্য নিজেকেই উৎসর্গ করেছি। হাসানুর এখানে ৬ বছর বয়স থেকে আছে। এখানে থাকা ৭৪ জন সবাই আমার সন্তানের মতো। তাই তাদের যেকোনো অর্জন আমার জন্য গর্বের। আমাদের শিশু শোধন পরিবারের সবাই খুশি। সবাইকে নিয়ে আমরা আজ উৎসব করবো। মাননীয় পুলিশ সুপারকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম ও ফলাফল ঘোষণা করেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ফুলেল শুভেচছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।
এ সময় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম তার বক্তব্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানান। তিনি সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার প্রেরণা ও প্রেষণা প্রদান করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আরআরএফ রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান, জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রার্থী ও তাদের অভিভাববৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, , কুড়িগ্রাম জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল ৫২ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে দুই হাজার ৩০০ জনেরও বেশি সংখ্যক প্রার্থী শারীরিক মাপ ও সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। যাচাই শেষে ৫৭৭ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরে লিখিত পরীক্ষায় ২৬৮ জন উত্তীর্ণ হয়ে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা টিআরসি নিয়োগ বোর্ড চূড়ান্তভাবে পুরুষ সাধারণ ২৬ জন ও নারী পাঁচজন, মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পুরুষ ১৩ জন ও নারী দুজন, পুলিশ পোষ্য কোঠায় পুরুষ চারজন ও নারী একজন এবং এতিম কোঠায় পুরুষ একজনসহ সর্বমোট ৫২ জনকে মনোনীত করে
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।