আন্তর্জাতিক

মসজিদে হারামে ইতিকাফকারীদের জন্য পরামর্শ

ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে ইতিকাফ করা যায়। তবে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিবন্ধন করতে হবে।

রোববার (১৭ মার্চ) থেকে মসজিদে হারামে অনলাইনে ইতিকাফের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিকাফ করতে আগ্রহীদের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (https://eservices.gph.gov.sa/Permessions/) আবেদন করতে হবে।

নিবন্ধনের শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে- ইতিকাফকারীর বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হওয়ার পাশাপাশি মসজিদের নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে এবং রমজানের ২০তম দিনের নির্ধারিত সময়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে।

গত বছর মসজিদে হারামে আড়াই হাজার মুসল্লি ইতিকাফ করেছেন। করোনা মহামারির পর ২০২২ সাল থেকে মক্কা-মদিনার এই দুই মসজিদে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে ইতিকাফের নিয়ম চালু হয়।

আগামী ৩০ মার্চ সন্ধ্যা থেকে এবারের রমজানের ইতিকাফ শুরু হবে।

ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশেষ সময়ে ও বিশেষ নিয়মে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ পালন করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা কেফায়া।

প্রতিবছর ইতিকাফ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা ইসলামের কেন্দ্রস্থল মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে সমবেত হন। পবিত্র রমজান মাস ওমরাহর মৌসুম হিসেবে পরিচিত। এ সময় বিশ্বের নানা দেশ থেকে মুসলিমরা ওমরাহ করতে সৌদি আরবে গমন করেন। গত বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করেন। এ বছর দুই কোটিরও বেশি ওমরাহযাত্রীর আশা করছে সৌদি আরব।

অনেক বাংলাদেশি মসজিদে হারাম ও নববিতে ইতিকাফ সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ চান। তাদের জন্য পরামর্শ হলো-

এক. মক্কায় রমজানের শেষ ১০দিনে বিভিন্ন জায়গায় চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০-২৫ লাখ মানুষের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন এলাকা আলাদা আলাদ করে সাজানো হয়। এসব বিধি-নিষেধ মাথায় রেখে চলাচল করা।

দুই. রমজানের শেষ দশকে ওমরাহ ছাড়া অবৈধ উপায়ে মুহরিম না হয়ে ইহরাম পরে তাওয়াফ করতে না যাওয়া। এটা স্রেফ প্রতারণা, এমন প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে দেওয়া কষ্ট আপনার রোজা, তাওয়াফ ও অন্যান্য নফল ইবাদত বরবাদ করে দিতে পারে।

অভিজ্ঞজনদের অভিমত হলো, বাদশাহ আবদুল্লাহ এক্সটেনশনে ইতিকাফ করা সহজ এবং সুবিধাজনক। এর কারণ হলো-

১. নতুন এক্সটেনশনের ভবনে অজুর ব্যবস্থা রয়েছে। আর এখান থেকে ওয়াশরুমগুলো কাছে। নামাজের সময় ছাড়া ওয়াশরুমগুলো প্রায় খালি থাকে। ওয়াশরুমের জন্য বের হলে ভেতরে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

২. নামাজের সময় ছাড়া চলাচল উন্মুক্ত রাখা হয়, আর ওমরাহকারীদের ভীড় এদিকে নেই।

৩. হাসপাতাল কাছে, জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত যাওয়া যায়। কমপ্লেক্সের বাইরের চত্ত্বরে বসে খাবার খাওয়া যায়।

অসুবিধাগুলো হলো-
১. মিসফালা বা ইবরাহিম খলিল রোডের বাঙালি হোটেলগুলো অনেক দূরে। এখান থেকে আজইয়াদের হোটেলগুলো কিছুটা কাছে। তাই জারওয়াল বা তাইসির এলাকায় রুম রাখতে হবে।

২. এই ভবনের বাথরুমে গোসলের জায়গা নেই। খাবার পানি সবসময় ঠান্ডা থাকে, নরমাল পানি সরবরাহ করা হয় না। পুরো ভবনের ভেতরে এসি অনেক বাড়ানো থাকে। তাই অনেকের ঠাণ্ডা লেগে যায়।

৩. একটু দূরে হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় গতবার ইফতার পৌঁছেনি। তাই বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখা।

৪. ইতিকাফ অবস্থায় তাওয়াফ করতে গেলে আপনাকে বাদশাহ ফাহাদ এক্সটেনশনে যেতে হবে। এ দিক থেকে যাওয়ার পথ খোলা থাকে খুবই কম সময়।

বাদশাহ ফাহাদ এক্সটেনশনের সমস্যা
১. অজুর জন্যও বাহিরে যেতে হয়। ওয়াশরুম দূরে এবং একই ওয়াশরুম অনেক মানুষ ২৪ ঘন্টা ব্যবহার করে। ফলে ভীড় ২৪ ঘন্টা লেগে থাকে। বাথরুমের জন্য বের হলে ভেতরে প্রবেশ করা অনেক কঠিন।

২. ওমরাহকারীদের ও বাহির থেকে আগত মুসল্লিদের ভীড় বেশি থাকে। ফলে চলাচলের অনেক জায়গায় নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৩. এ এলাকায় ভিআইপিদের যাতায়াত থাকে বেশি, ফলে প্রোটোকলের কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়।

৪. বাদশাহ ফাহাদ এক্সটেনশনেও নরমাল পানি পাওয়া যায় না। অর্থাৎ পুরো হারামে কোথাও নরমাল পানি নেই বলা যায়।

সুবিধা
১. বাঙালি খাবার হোটেল কাছে। আজইয়াদ ও মিসফালা বিশেষ করে ইবরাহিম খলিল রোড কাছে। সহজে তাওয়াফের জন্য যাওয়া যায়। নরমাল পানি পাওয়া যায়।

২. নামাজের সময় ভেতরে থেকে জায়গা বদলে তাওয়াফের জায়গায় যেয়ে নামাজ পড়া যায় সহজে।

যারা ইতিকাফে বসবেন তাদের জন্য পরামর্শ
১. শুকনো খাবার খাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি রাখা।

২. প্রস্রাব-পায়খানার ক্ষেত্রে নিজের কন্ট্রোলের সামর্থ্য থাকা। একটু পর পর প্রস্রাব-পায়খানার সমস্যা থাকলে হারামের হুদুদে (সীমানার ভেতরে) অন্য কোথাও ইতিকাফ করা ভালো।

৩. খেজুর, টকদই, রুটি ও পনির খাওয়ার অভ্যাস থাকতে হবে ১০ দিনের জন্য। হালকা কাপড় রাখবেন, নরমাল স্যান্ডেল রাখবেন মোজা পড়া যায় এমন।

৪. প্রচুর হাঁটার অভ্যাস থাকা। দৈনিক অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার।

৫. বিভিন্ন সময় চলাচলের জায়গা নিরাপত্তার জন্য বন্ধ করা হবে। তখন ধৈর্যের দরকার হবে।

৬. মক্কার হারামের কোন দিকে কি আছে, কোন দিকে গেলে আপনার বসার স্থান, এগুলো সব চিনে রাখতে হবে। অধিকাংশ কর্তব্যরত পুলিশরা এগুলো চিনে না।

৭. কারো সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মসজিদের বাহিরে জায়গা নির্ধারণ করবেন। ভেতরে নির্ধারণ করলে আপনি খুব সহজে সেই জায়গা খুঁজে পাবেন না।

৮. প্রয়োজনীয় ওষুধ, কাগজ, কিছু টাকা, ভিসার কপি, পাসপোর্ট কপি, কলম, মেসওয়াক, ট্রাভেল সাবান ও টিস্যু এগুলো ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগে রাখবেন। পিঠের ব্যাগ না।

৯. সিভিট জাতীয় ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন রাখবেন। সেই সঙ্গে ২০ হাজার এমএইচের পাওয়ার ব্যাংক রাখবেন।

১০. মোটা জায়নামাজ ও ইহরামের কাপড় নিয়ে ঢুকবেন। জায়নামাজ নিচে বিছাবেন ও শুবেন। ইহরাম গায়ে দেবেন। নামাজের জন্য পাতলা জায়নামাজকে মাথার বালিশ বানাবেন।

১১. কাপড়চোপড় ও ব্যাগ রাখার জন্য কয়েকজন মিলে একটা রুম ভাড়া নিয়ে রাখবেন।

১২. ঈদের চাঁদ উঠলেই বের করে দেবে। দ্রুত বের হয়ে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন সেই পরিকল্পনা করবেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *