সারাদেশ

নেশা জাতীয় ১০০ পিস ইনজেকশনসহ যুবক গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্ট: ট্রেনের টিকিটের মূল্যছাড় বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তে যাত্রীদের ক্ষোভ-উদ্বেগ বাড়ছে। কাক্সিক্ষত মাত্রায় রেলের সেবা না বাড়লেও আগামী মাস থেকেই বাড়ছে ভাড়া। একশ কিলোমিটারের পর থেকে বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি অর্থ যোগ হবে। সমন্বয়ের নামে ঈদের আগেই ভাড়া বৃদ্ধি সাধারণ যাত্রীদের চাপে ফেলবে। এতে মানুষের যাতায়াত ব্যয় বাড়বে।

অন্যদিকে মূল্যছাড় বাতিলে বছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি আয়ের প্রাক্কলন করেছে রেল। তবে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তরের মতে, পর্যাপ্ত কোচ দিয়ে ট্রেনগুলো চালানো সম্ভব হলে বছরে আয় বাড়ত প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। বর্তমানে একটি ট্রেন সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম কোচ নিয়ে চলাচল করছে। মূল্যছাড় বাতিল হলে ১০০ কিলোমিটার পর (১০১-২৫০ কিলোমিটার) বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে ২০ শতাংশ যুক্ত হবে। ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ৪০০ কিলোমিটারের ওপরে ভ্রমণ করলে ৩০ শতাংশ ভাড়া যুক্ত হবে। এতে পূর্বাঞ্চল রেলে ১২০ থেকে ২১৬ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলে গুনতে হবে ১২০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি।

এ প্রসঙ্গে রোববার বিকালে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘রেলে টিকিটের ভাড়া বাড়ছে না। ২০১২ ও ২০১৬ সালে ট্রেনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর বাড়েনি। দীর্ঘ ৮ বছরে ট্রেন পরিচালনায় জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে মূল্য বেড়েছে। এখন লোকসান কমাতে রেয়াত, মানে মূল্যছাড়টুকু বাতিল করতে যাচ্ছি। বাণিজ্যিক কৌশলটি আমাদের নিতেই হচ্ছে। তিনি বলেন, একসময় ট্রেনে তেমন যাত্রী ছিল না। যাত্রীদের আকৃষ্ট করতেই ১৯৯২ সালে টিকিটে মূল্যছাড় দেওয়া হয়। এখন রেলে যাত্রীর চাপ বেশি, আগের অবস্থা আর নেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে ভাড়া না বাড়িয়ে টিকিটের ওপর যে মূল্যছাড় ছিল, তা বাতিল করা হচ্ছে।’

সরদার সাহাদাত আলী আরও বলেন, ‘১ এপ্রিল থেকে এটা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। চূড়ান্ত হলে রেলপথমন্ত্রী প্রেস বিফ্রিংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। তবে রেলে ভাড়া বাড়ানো জরুরি, যা আমরা করতে পারছি না। এখন বাধ্য হয়েই টিকিটের মূল্যছাড় বাতিল করতে যাচ্ছি। এতে কেবল বেশি দূরত্বে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা বাড়বে।’

এদিকে এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, রেলের লোকসান কমাতে আরও অনেক পথ ছিল। হাজার হাজার একর জমি বেদখলে। এসব জমি উদ্ধার করে বাণিজ্যিক কাজে লাগানো সম্ভব। তাছাড়া যেসব ট্রেন চলছে, সবকটি স্বল্প কোচ নিয়ে চলছে। স্বল্প কোচ নিয়ে চলা ট্রেনগুলোয় যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ হচ্ছে এবং জনবল লাগছে, তা দিয়েই যথাযথ কোচ নিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব।

জানা যায়, বর্তমানে রেলের প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ-কেবিন এবং অন্যান্য উচ্চ শ্রেণিতে (শ্রেণিভেদে) ভ্রমণ করলে ৩৯ পয়সার সঙ্গে অতিরিক্ত পয়সা এবং নির্ধারিত ভ্যাট যোগ হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, ১৯৯৩ সাল থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০, ২৫ এবং ৩০ শতাংশ ভাড়া রেয়াত-ছাড় ও মূল্যছাড় দিয়ে আসছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম নিয়মিত ভ্রমণ করেন বিল্লাল হোসেন। জানালেন, রেলপথে কম বা বেশি উভয় দূরত্বে সাধারণ মানুষই চলাচল বেশি করেন। যাদের বাড়ি-গাড়ি, অর্থবিত্ত রয়েছে, তারা সড়কপথ কিংবা বিমানে ভ্রমণ করেন। ১৯৯২ সাল থেকে যে রেয়াত বা মূল্যছাড় দিয়ে আসছে, সাধারণ মানুষ যেখানে খেয়ে-পরে বাঁচতে কষ্ট হয়; সেখানে সাধারণ মানুষের বাহনের ওপর কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ক্ষোভ উগরে এমন প্রশ্ন করলেন বিল্লাল হোসেন।

রোববার সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে ট্রেনযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান ভাড়ার চেয়ে দূরত্বভেদে ১২০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কাটতে হলে তা একেবারেই জুলুমের শামিল হবে। কামরুননাহর শিউলী নামের এক যাত্রী জানান, সরকার খুব সহজেই রেলের ব্যয় কমিয়ে রেলকে লাভবান করতে পারে। যে পদে রেল লাভবান হবে, সে পথে যাচ্ছে না সরকার। সাধারণ যাত্রীদের ওপরে খুব কৌশলে রেয়াত বা মূল্যছাড় তুলে দিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক দপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে করা রেয়াত বা মূল্যছাড়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফাইল পাঠানো হয়। ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এতে অনুমোদন দেন। পরে মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করতে রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। সেই অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে মূল্যছাড় প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এদিকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোয় টিকিট বিক্রিতে কোনো রেয়াত বা মূল্যছাড় দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে বেশি দূরত্ব রুটে কোনো ধরনের রেয়াত রাখা হবে না বলেও জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ১ এপ্রিল থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি একাধিক কোচ বা বেশি সংখ্যক টিকিট কেনেন, সেই ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে শোভন শ্রেণির কামরায় ২০ শতাংশ, প্রথম শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব যে কোনো শ্রেণির কামরার জন্য ৩০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ট্রেনযাত্রী আব্দুর রহিম জানান, তিনিও নিয়মিত ট্রেনে ভ্রমণ করেন। রেলের বিপুল ঘাটতি মেটানোর জন্য সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি না ফেলে অন্যভাবে করা যেত। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এক বা একাধিক কোচ ভাড়া নেয় বা বেশিসংখ্যক টিকিট নেয়, সে ক্ষেত্রে রেয়াত বাতিল করা যেতে পারে। সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে এ রেয়াত বাতিল মঙ্গলজনক নয়। এক রেলকর্তার আক্ষেপ, ‘রেয়াত বাতিল হবে বটে, কিন্তু বিনা টিকিটি রুখবে কে। দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে বাণিজ্যিক কাজে লাগাবে কে। এমন করে কি লোকসান কমবে?’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *