সারাদেশ

অবরোধ বিরোধী মিছিল করছে আওয়ামী লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট: কক্সবাজারগামী প্রথম ট্রেনটা দোহাজারী স্টেশনে এসে থামল সবে। গগনবিদারী আওয়াজে এরপর দিল হুইসেল। সেটি শুনেই দুই পাশেই ছুটে এল মানুষ। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নারী-শিশুরাও। কেউ হাত নেড়ে নেড়ে দিতে থাকেন অভিবাদন। কেউবা ঐতিহাসিক মুহূর্তটা বন্দী করে রাখেন মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়।

এমন উচ্ছ্বাস হওয়ারই তো কথা। প্রায় নব্বই বছর ধরে দেশের সর্ব দক্ষিণের রেলওয়ে স্টেশনের নাম ছিল দোহাজারী স্টেশন। তাই মানুষের মুখে মুখে এটির নামই হয়ে যায়- ‘আখেরি স্টেশন’! চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় অবস্থিত স্টেশনটি আর শেষ স্টেশন নয়। এখন যে দোহাজারী থেকেই দক্ষিণে প্রায় ১০১ কিলোমিটার রেলপথ গিয়ে পৌঁছেছে পর্যটক শহর কক্সবাজার পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবে তাই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে নতুন রেলপথ হয়ে এসেছে স্বপ্নের মতো করে।

দোহাজারী স্টেশন পার হলেই পর শঙ্খ নদ। সেই নদের পরেই শুরু সাতকানিয়া উপজেলা।

স্থানীয় কালিয়াইশ ইউনিয়নের বাসিন্দারা রেললাইনের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রথম ট্রেন যাওয়ার দৃশ্য দেখছিলেন। তাদেরই একজন মো. ইছহাক সওদাগর। প্রায় ৬০ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী বলেন, রেললাইন শুধু আমাদের যোগাযোগে গতি আনেনি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারও ঘটাবে। এতদিন গাড়ি দিয়ে কক্সবাজারে যেতে হতো। কিন্তু সড়ক সরু হওয়ায় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। এখন সেই ঝুঁকি থেকে আমরা মুক্তি পাব।

পাশের একটি ঘরে বৈদ্যুতিক কাজ করছিলেন মো. শফি নামের এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। তিনি বলেন, হুইসেলের আওয়াজ শুনে দৌড়ে এলাম। বাড়ির পাশ দিয়ে প্রথম ট্রেন যাচ্ছে, সেই দৃশ্য না দেখে কি পারি?

অবিভক্ত আসাম রেলওয়ে ১৯২৯-৩১ সালে পূর্বাঞ্চলীয় রেল কর্ত‍ৃপক্ষ চট্টগ্রাম শহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৭ কিলোমিটারের এ রেলপথ নির্মাণ করে।
এরপর কেটে যায় সুদীর্ঘ ৯০ বছর। দক্ষিণে অবশেষে বাড়ল রেলপথের দৈর্ঘ্য।

প্রবল বন্যায় গত জুলাই মাসে তলিয়ে গিয়েছিল সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেললাইনও। পরে সংস্কার করা হয় রেলপথ। পানি যাতে জমে না থাকে সেজন্য রেলপথ ঘিরে নতুন পরিকল্পনাও করা হয়। এখন সেই পথ ধরেই শা শা করে ছুটছে ট্রেন।

তেমুহনীর স্থানীয় বাসিন্দা জাফর আলম বলছিলেন, বন্যার পর যা পরিস্থিতি হয়েছিল ভেবেছিলাম সহজে এই প্রকল্প চালু হবে না। কিন্তু আমাদের সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে। অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম, বাড়ির পাশ দিয়ে কবে ট্রেন যাবে সেটি দেখতে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো ট্রেন যাচ্ছে আজ রোববার (৫ নভেম্বর)। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শনের জন্য এই ট্রেন চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে নতুন নির্মিত এই রেললাইন যাচাই করে দেখছেন পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

সকাল ৯টা ২মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে সরকারি রেল পরিদর্শক রহুল কাদের আজাদ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলামসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা আছেন। ট্রেনটিতে আটটি বগি রয়েছে। বিভিন্ন স্টেশন, হাতি পারাপারের করিডোরসহ রেলপথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন অধিদফতর ছাড়পত্র দিলে নতুন রেলপথটি ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী বলে বিবেচনা করা হবে। এরপর ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক চলাচল) ও আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে। ১১ নভেম্বর এই রেললাইন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যাত্রাপথে লোহাগাড়ার ক্যামেলিয়া পাড়া এলাকায়ও থামে ট্রেনটি। যথারীতি সেখানেও ভিড় জমায় উৎসুক মানুষ। সেখানে থাকা কল্পনা বড়ুয়া নামের মধ্যেবয়সী এক নারী বলেন, কোনোদিন ভাবিনি ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যেতে পারব। আমাদের স্বপ্ন এখন বাস্তব। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ।

২টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি এসে পৌঁছায় চকরিয়া স্টেশনে। সেই স্টেশনে কয়েকশ মানুষ অপেক্ষা করেন ট্রেন দেখতে। সবার মুখেই একটাই কথা, অপেক্ষার অবসান হলো অবশেষে। এবার শুধু যাত্রা শুরুর পালা।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ডিসেম্বরের দিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *