সারাদেশ

বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে কুপিয়ে জখম

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন আজ। একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে অবরোধের কারণে নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া মানুষ, যানবাহনের চালকরা। গত সপ্তাহের অবরোধ শেষ না হতেই ফের অবরোধের ঘোষণা আসায় চিন্তিত সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন রাজনৈতিক দলগুলোর রেষারেষিতে প্রতিবারই তাদের ক্ষতি হয়। এমন সমস্যার সামাধান চান তারা। 

অবরোধ নিয়ে ফেনীর মানুষ কি ভাবছে। এমন প্রশ্ন নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে কথা বলেছে বার্তা-২৪ এর প্রতিবেদক। এতে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের নানা সমস্যার কথা। কেউ বলছেন কাজ না থাকলে পেটে ভাত ও নেই, কেউ আবার শঙ্কিত নিজের পরিবার ও ছেলে সন্তানদের নিয়ে। কেউবা আবার ব্যবসায়িক মন্দার কথা তুলে ধরে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

ফেনী শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দোকানের আয় থেকে সংসার চলে। আমাদের বেচাকেনা না হলে না খেয়ে থাকতে হবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। জীবিকার তাগিদে পথে নেমেও অবরোধের কারণে প্রায় খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হয়। রাজনৈতিক টানহপোড়েনের জেরে পুঁজি হারানোর আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। এমন পরিস্থিতিতে দেশে কোন রকম হরতাল বা অবরোধ না হোক সেটাই প্রত্যাশা করছে ব্যবসায়ীরা।

শহরের খেটে খাওয়া মানুষরা বলছেন, দিন মজুর দিনে কাজ করে উপার্জিত টাকা দিয়ে বাজার করে খাবার জোগার করে। কাজ বন্ধ থাকলে খাবার কীভাবে জুঁটবে। যত বড় কিংবা ছোট সহিংসতাই হোক না কেন দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। তাই এসব রাজনৈতি খেলা বন্ধ করার আহবান তাদের।

রেদওয়ানুল কবির নামে ফেনী শহরের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের দৈনিক যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। অবরোধের কারণে মানুষ ঘর থেকে কম বের হয়, এতে আমাদের বেচাকেনাও হয় না। নিরুপায় হয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়।

আবুল কাশেম নামে একজন দিনমজুর বলেন, কাজ না মিললে সেদিনের আয় বন্ধ। সকালে বাজারে দাঁড়াইছি কাজের জন্য কিন্তু কাজ মেলেনি। একদিকে বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম, আবার কাজ ও পাচ্ছিনা। সারাদিন অলস ভাবে কাটাতে হবে। উপার্জন বন্ধ হলে দুইবেলা ভাত খাওয়ার ও উপায় থাকেনা।

এ বিষয়ে কথা হয় শহরের একাধিক রিকশাচালকদের সাথে। তারা বলছেন, অবরোধের মধ্যে শহরে রিকশা চালানো গেলেও যাত্রী কম। এতে আমাদের দৈনিক মালিককে দেওয়ার যে টাকা সে টাকাও উপার্জিত হয়না। এমন দিন আমরা চাইনা। আমরা স্বাধীনভাবে দুইবেলা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

শাফায়েত হাসান নামে একজন বাস চালক বলেন, শহরে বাসগুলো অবরোধের কারণে বন্ধ রাখতে হয়। কোন সংঘাত সৃষ্টি হলে বাসের ক্ষতির কথা চিন্তা করে বন্ধ রাখি, কিন্তু এতে আমাদের আয় ও বন্ধ হয়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশী, আয় ও বন্ধ। এমন চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।

অন্যদিকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও মূল্যায়ন পরীক্ষা। অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

মুনতাহা নামে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা হলেও এবার নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন আবার অবরোধ শুরু হয়েছে, রাস্তায় হঠাৎ কোন দুর্ঘটনা ঘটে কি না এ নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়।

রাবেয়া সুলতানা নামে একজন অভিভাবক বলেন, সন্তান স্কুলে গেছে, আমি বসে প্রার্থনা করা ছাড়া উপায় নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব স্কুল গুলোতে যাতে না পড়ে সে আহবান জানান তিনি।

এ বিষয়ে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বার্তা২৪ ডট কমকে বলেন, অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব ব্যবসার মধ্যে খুব ভালো ভাবে পড়েছে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম বেশী, অন্যদিকে অবরোধের কারণে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলতে পারছেনা। এতে করে অতীতে করোনাকালীন যে ক্ষতির শিকার ব্যবসায়ীরা হয়েছিল, তা পুনরায় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রেখে ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য রাখতে হবে।

শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে জেলা পুলিশের একাধিক দল। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে কাজ করছেন তারা।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বার্তা২৪ ডট কমকে বলেন, কর্মসূচি পালনের নামে কেউ কোন ধরনের নাশকতা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‍্যাব, বিজিবি, আনসারের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *