আন্তর্জাতিক

আবারও জিম্মি জাহাজ সরালো দস্যুরা, খাবার সাশ্রয়ে রাতে খাচ্ছেন না নাবিকরা

ডেস্ক রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অব্যাহত চাপের মুখে পড়ে সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজটিকে নিজেদের উপকূলের আরও কাছে সরিয়ে নিয়েছে। এখন এমভি আবদুল্লাহ নামের এই জাহাজটি এখন তীরের মাত্র দেড় মাইল দূরে নোঙর করা আছে। তবে দস্যুরা হুমকি দিয়ে রেখেছে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী ‘বাড়াবাড়ি’ করলে জাহাজটিকে তীরে তুলে দেবে তারা।

জিম্মি নাবিকদের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান। জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের পরিস্থিতি সবাইকে জানিয়ে আসছেন এই ক্যাপ্টেন।

ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান জিম্মি নাবিকদের বরাতে আরও বলেছেন, ‘কদিন জাহাজের খাবার খাওয়ার পর জলদস্যুদের অধিকাংশই আবার নিজেদের জন্য স্থানীয় খাবার আনা-নেওয়া শুরু করেছে। এতে জাহাজের খাবার হয়তো কয়েকদিন বেশী যেতে পারে। আর জাহাজের নাবিকরাও খাবার সাশ্রয়ের জন্য রাতের খাবার (ডিনার) বাদ দিয়েছেন। এখন মূলত ইফতার আর সেহরি তৈরি হচ্ছে সবার জন্য। এছাড়া সচরাচর জাহাজে যেভাবে একাধিক তরকারি রান্না হতো, সেটিও পরিহার করা হচ্ছে।’

জাহাজের কার্গো (কয়লা) হোল্ডের বর্তমান পরিবেশ নিরাপদ আছে বলেও জানিয়েছেন নাবিকরা। তবে তারা বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ‘নৌবাহিনীর চাপের ফলে সব নাবিককে এখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ব্রিজে রাখছে দস্যুরা। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ (ওয়াকি টকি) ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে। পানি রেশনিং এবং সবসময় ব্রিজে অবস্থান করায় সবার পক্ষে নিয়মিত গোসল করা আর কাপড় ধোঁয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কারো কারো ত্বকে চর্মরোগ দেখা দিয়েছ। আর ব্রিজে শৌচাগার মাত্র একটি। এই এক শৌচাগার ২৩ জন নাবিক ছাড়াও ২৫-৩০ জন জলদস্যু ব্যবহার করছে। তাদের ওজনের কারণে কমোডের সিট ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে। তাছাড়া তারা খুব অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় বাথরুমও পরিষ্কার করে না। যার ফলে এই বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা আর ব্যবহার করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান নাবিকদের বরাতে বলেছেন, ‘গত দুইদিন আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে বেশ চাপের মুখে রেখেছে। যুদ্ধজাহাজগুলো এমভি আবদুল্লাহর দেড় মাইলের মধ্যে চলে এলে জলদস্যুরা জাহাজের নোঙর তুলে আরও কাছে চলে গিয়ে তীরের মাত্র দেড় মাইল দূরে আবার নোঙর করেছে। দস্যুরা হুমকি দিয়েছে, বাড়াবাড়ি করলে জাহাজ তীরে তুলে দিবে। তবে নৌবাহিনী এখনো বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এই চাপ হয়তো জলদস্যুদের দ্রুত মুক্তিপণ দাবিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।’

নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন। তবে এখন পর্যন্ত দস্যুদের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ বা দাবির বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে জাহাজের মালিকপক্ষ এবং সরকার নাবিকদের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটিতে সন্তুষ্ট নাবিকেরা।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। পরে গত বৃহস্পতিবার জাহাজটিকে নিজেদের উপকূলে নিয়ে যায় দস্যুরা। এরপর অন্তত চারবার জাহাজটিকে সরিয়েছে তারা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *