কোথায় নেই সাকিব আল হাসান!
ডেস্ক রিপোর্ট: সাকিব আল হাসান; এক নামের পরিচিত সারাদেশে, বিশ্বক্রিকেটে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। মাঠে ব্যাট-বলে ঝড় তুলেন। ক্রিকেটার হিসেবে এটা স্বাভাবিক। আবার ক্রিকেটের বাইরেও তিনি সমভাবে আলোচিত। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে সেটা গোপন করে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ফিরেছেন মাঠে। সব সংস্করণের ক্রিকেটে করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব। দেশে-বিদেশের ফ্রাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলেছেন, খেলছেন। ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন তিনি, ক্রিকেট থেকেও পেয়েছেন সব। থেকেছেন আলোচনায়, সমালোচনায়; আছেন এখনো।
সাকিব আল হাসান একজন ক্রিকেটারই কেবল নন, তিনি সফল ব্যবসায়ীও। ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হয়েছে যেমন তাকে নিয়ে, তেমনি হয়েছে বিতর্ক-সমালোচনাও। এই আলোচনা-সমালোচনাকে তিনি উপভোগ করেন বলেই কিনা কোনো কিছুই তাকে প্রভাবিত করতে পারে না। সাফল্য পান, সমালোচনা হজম করেন, ঈর্ষাও দেখেন; তবে তিনি চলেন নিজের মতো করে, সাফল্যের পথে।
ক্রিকেটার, ব্যবসায়ী সাকিব আল হাসান এখন একজন সংসদ সদস্য। দেশের আইনপ্রণেতা। ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি তিনি। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার মতো আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য। মাশরাফী একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছিলেন প্রথমবারের মতো, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয়বার। এবার সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জিতেছেন মাগুরা-১ সংসদীয় আসন থেকে। তার এই জয় ছিল বিপুল ভোটের ব্যবধানে। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সাকিব আল হাসান পান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট; যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৫ হাজার ৯৭৩। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে একপেশে লড়াইয়ে সাকিবের জয়ই ছিল অনুমিত। হয়েছেও তাই।
ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরে আলোচনায় থাকা সাকিবের রাজনীতিতে আসা নিয়ে নানা মত আছে, থাকুক। তবে আলোচনায় এসেছে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম নামের একটা ‘কিংস পার্টিতে’ যোগ দিয়েছিলেন। সেই খবর প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক সমকাল। সমকালের প্রতিবেদনের পর এটা মূলত এখনকার ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। চিরায়ত বিভক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বরাবরের মতো একদল সাকিবের পক্ষে, আরেক দল সাকিবের বিপক্ষে; চলমান আলোচনা-সমালোচনা।
সমকালের সচিত্র প্রতিবেদনের পর এনিয়ে কথা বলেছেন নির্বাচনের আগে বিএনএম নিয়ে আলোচনায় থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপির বর্ষীয়ান এই নেতা জানিয়েছেন, তিনি বিএনএমে যোগ দেননি। তবে তার কাছে ওই দলটির নেতারা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বনানীতে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সাকিব আল হাসানকে আমার কাছে নিয়ে আসে। সে রাজনীতি করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সাকিবকে কোনো উৎসাহ দিইনি। সে বিএনএমে যোগ দেয়নি। আমার কাছ থেকে তেমন কিছু না পেয়ে সে চলে যায়।’ জানা গেছে, ঘটনাটি গত বছরের নভেম্বরের। এই বৈঠকের পর সাকিব আল হাসান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, এবং এরপর মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সাবেক ক্রীড়াবিদ ও মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে গত নির্বাচনের আগে অনেক গুঞ্জন ছিল। খোদ তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তার নতুন দলে যোগদান নিয়ে কথা বলেছিলেন। গণমাধ্যমেও এসেছিল তেমন খবর। তবে শেষ পর্যন্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দলবদল করেননি, নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি কারাগারে গেছেন, এবং সম্প্রতি তিনি কারামুক্ত হয়েছেন। অদ্যকার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনএমে যুক্ত না হওয়ার না জানালেও তার বাসায় যে বিএনএমের নেতারা গিয়েছিলেন সেটা অস্বীকার করেননি, অস্বীকার করেননি বিএনএম নামের দলের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের তৎকালের সম্পর্কের কথাটাও।
কেবল হাফিজ উদ্দিন আহমেদই নন, সাকিব আল হাসানের বিএনএম-সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়কপরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন তিনি এ বিষয়ে ‘কিছু জানেন না’। ওবায়দুল কাদেরের ভাষ্যমতে, ‘সাকিব আওয়ামী লীগের টিকিটে মাগুরা থেকে ইলেকশন করে জয় লাভ করেছে। পার্টির কাছে নমিনেশন চাওয়ার সময় সে পার্টির সদস্য। তার আগে তো সাকিব আমাদের পার্টির কেউ ছিল না। নমিনেশন যখন নেয় তখন তাকে তো প্রাইমারি সদস্য পদ নিতে হয়। সেই শর্ত পূরণ করা দরকার সেটা সে করেছে। সেভাবেই আমরা মনোনয়ন দিয়েছি। সে এমপি হয়েছে। আমি এই বিষয়ে আর কিছু জানি না।’
যাকে নিয়ে রাজনীতিতে ‘হঠাৎ ঝড়’, সেই সাকিব এনিয়ে কিছু বলেননি; না গণমাধ্যমে, না সামাজিক মাধ্যমে! এমনই বুঝি সাকিব আল হাসান, যেখানে থাকেন সেখানে আলোচনার জন্ম দেন; ইতিবাচক-নেতিবাচক সকল ক্ষেত্রেই। তিনি কিছু বললে সেটা যেমন সংবাদ, না বললেও সংবাদ।
সাকিব আল হাসান রাজনীতির মানুষ ছিলেন না। সংসদ সদস্য হতে নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। হয়েছেনও। তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হলেও দলটির সক্রিয় নেতা নন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যদি হতে পারেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বিএনএম থেকে আওয়ামী লীগের সাকিব আল হাসানে তবে সমস্যা কোথায়? অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের রাজনীতিতে বিশেষ করে সংসদ সদস্য করে নেওয়া যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা আর সাকিব আল হাসানেরা এর অংশ বিশেষ।
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে থাকা সাকিব আল হাসানের বিএনএম-সম্পৃক্ততা নিয়ে এত কথা যেখানে, সেখানে আলোচনা এই পথে না রেখে তারচেয়ে বরং প্রশ্ন তোলা যায়—রাজনীতিবিদদের হাত থেকে রাজনীতিকে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে!
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।