আন্তর্জাতিক

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

ডেস্ক রিপোর্ট: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের মাটির ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গ্রামেও। এক সময় গ্রামে দেখা যেত নজরকাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের মাটির ঘর। এ চিরচেনা দৃশ্যটি গ্রাম বাংলায় আর দেখা যায় না। 

নওগাঁর মহাদেবপুর, মান্দা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর,পত্নীতলার প্রত্যন্ত গ্রামে এখনো দেখা মেলে দোতলা বিশিষ্ট মাটির ঘর। প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন মাটির ঘরকে ভালোবেসে এখনো অক্ষত রেখেছেন গ্রামের অনেকেই। মাটির ঘরকে অনেকে বালাখানাও বলে থাকেন।

নওগাঁর সবচেয়ে বড় মাটির ঘর মহাদেবপুর উপজেলায়। এটিকে বলা হয় মাটির প্রাসাদ। এই মাটির প্রাসাদে মোট ১০৮ টি কক্ষ রয়েছে। দোতলা হলেও কোনো ধরনের ইট বা সিমেন্টের ব্যবহার করা হয়নি।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রায় ছয় বিঘা জমির ওপর এ মাটির প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়।

মাটির ঘর নির্মাণে মাটি, খর ,তালগাছের তীর, টিন, বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার করা হয়। মাটির ঘর নির্মাণ শেষে দেয়ালে বিভিন্ন রকমের প্রলেপ দেয়া হয়। এতে আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে বাড়িটি। মাটির ঘর তৈরি করা সহজ নয়, আবার খরচও ব্যয়বহুল। প্রতি দোতলা মাটির বাড়ি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।

মৌসুমি বেকারত্বের কারণে অনেক সময় নিজ বাড়ি ছেড়ে শহরমুখী হয় গ্রামের অনেক মানুষ তখন খানিকটা অবহেলায় পড়ে থাকে মাটির ঘরগুলো, তবে ছুটিতে বাড়িতে এলে আবারো গোছানোর চেষ্টা করে থাকেন গ্রামের মানুষ। শহরে উঁচু উঁচু দালানকোঠার ভিড়ে অনেকেই মন স্থির করতে না পেরে চলে আসেন মাটির বাড়ির টানে। গরমকালে মাটির ঘরে এক অন্যরকম প্রশান্তি পাওয়া যায়। মাটির কারনে ঘরটি শীতল থাকে। আবার অন্যদিকে ঠান্ডার সময় মাটির ঘরে শীত কম লাগে।

নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা গ্রামের প্রবীন আবু হাসান বলেন, আমার বয়স প্রায় ৬০ বছর হবে, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের মাটির খুব সুন্দর একটি বাড়ি ছিল। প্রতি ঈদে নতুন করে সাজানো হতো আমাদের বাড়িটি। বিভিন্ন রং এর প্রলেপ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হতো কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রাম থেকে মাটির ঘর কমতে থাকে, চারিদিকে ইটের পাকা ঘর উঠতে থাকে তাই সে সময় গুলো আজও মনে পড়ে আমার।

ধামইরহাটের আলতাদিঘি এলাকার আব্দুর রহমান ( ৭০) বলেন, মাটির ঘরের কথা মনে পড়লে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। আমাদের সময়ে যে হারে মাটির বাড়ি ছিল এখন তেমন নেই বললেই চলে। ইট পাথরের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এই মাটির ঘর। আমার ঘর এখনো মাটিরই আছে, তবে আমি মারা যাবার পর ছেলেরা কি করবে সেটা জানি না।

মান্দা উপজেলার এক যুবক বলেন, বাপ দাদারা মাটির ঘরে জীবন কাটিয়ে গেছেন বলে আমার মাটির ঘরটিতে নানা স্মৃতি রয়েছে তাই ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করে না।

নানা স্থানে দৃষ্টিনন্দন এ মাটির ঘরের সন্ধান পাওয়া গেলেও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে এটি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *