সারাদেশ

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও ভারত থেকে আসেনি পেঁয়াজ, চিনি

ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র রমজান শুরুর ১০ দিন পার হলেও ভারত থেকে আমদানির খবর নেই পেঁয়াজ ও চিনির। সে কারণে দেশের বাজার কোনোভাবেই স্থিতিশীল থাকছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যদ্রব্যের আমদানি স্বাভাবিক হলে এসব পণ্যের দাম কমে আসবে।

২৪ জানুয়ারি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রীকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

জানা যায়, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে আর স্বস্তির নিশ্বাসে পার করবেন মাসটি।

সূত্র জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি জরুরি খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ বাড়াতে সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণবিতরণবিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। এ সময় আহসানুল ইসলাম তাকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।

তখন জানানো হয়, রমজানের আগেই পেঁয়াজ ও চিনি দেশে ঢুকবে। এ ঘোষণার প্রায় মাস পার হতে চললেও নানান প্রতিবন্ধকতায় এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ, চিনি ভারত থেকে দেশে আসেনি।

এদিকে, আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, খাদ্যদ্রব্য আমদানি স্বাভাবিক হলে রমজানে এসব পণ্যের দাম কমে আসবে।

বেনাপোলের আমদানিকারকরা বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, বছরখানেক ধরে ভারত থেকে চাল, চিনি, পেঁয়াজ ও গম আমদানি বন্ধের কারণে ও সেইসঙ্গে বাজার সিন্ডিকেটের ফলে কোনোভাবেই এসব পণ্যের বাজার মূল্য স্থিতিশীল থাকছে না। মাঝে-মধ্যে আমদানির খবরে দাম কমে এলেও পরে আবার তা বেড়ে যায়।

এবিষয়ে বেনাপোলের আমদানিকারক উজ্বল বিশ্বাস বলেন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম রোজার আগেই ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আমদানির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত তার কিছুই আসেনি। জরুরি পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলে বাজারে দাম কমে আসতো।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ভারতের নিষেধাজ্ঞা নিত্যপণ্য আমদানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

বেনাপোল আমদানি, রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, দেশের বাইরে পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একের পর এক শর্ত অস্থির করে তুলেছে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার। এতে দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতির বাজারে আরো বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

তিনি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বার্ষিক কোটা চুক্তিতে ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন ও আদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুন রফতানির অনুরোধ করা হয়েছে।

বেনাপোল সীমান্ত, ছবি- সংগৃহীত এর আগে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটানকে কোটা সুবিধায় পণ্য আমদানিতে সুযোগ দিয়েছে ভারত। ভারতের সঙ্গে নিত্যপণ্যের কোটা চুক্তির বাস্তবায়ন আমাদের দেশের যে কোনো খাদ্যসংকট মেটাতে পারে। তারা আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুদেশ। আশা করছি, বাণিজ্য সহজীকরণ করতে তারা পাশে থাকবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে অন্যান্য পণ্যের আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও অনেকদিন ধরেই ভারত থেকে পেঁয়াজ, চিনি, গম ও চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রফতানি মূল্য ৮শ ৫০ ডলার বৃদ্ধি করায় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।

২০২২ সালের ২০ জুলাই থেকে সেদ্ধ ও আতপ চাল আসাও বন্ধ রয়েছে। একই বছরের ১৩ মে থেকে বন্ধ রয়েছে গম এবং ২৮ ডিসেম্বর থেকে চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি মিলস অ্যাসোসিয়েশনের একটি অভিযোগ দায়ের করার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *