সারাদেশ

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে মিলছে না কোন পণ্য

ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ২২ মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০২৪’ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী- প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানি সম্পদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং এরপর থেকে এ দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি গ্রামাঞ্চলে অবহেলিত মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে কুষ্টিয়ার একটি সামাজিক সংগঠন “স্মাইল ইন লাইফ” এ কাজে সহযোগিতা করছে ফুটস্টেপস বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. বাপ্পি। কুষ্টিয়ায় গেল এক বছরে ১৮৭টি ‘প্রজেক্ট তৃষ্ণা’ নামে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির টিউবওয়েল স্থাপন করেছে।

মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কবরবাড়ীয়া এলাকার বৃদ্ধা ছকিনা বেওয়া। তার বাড়িতে টিউবওয়েল না থাকায় ক্যানেল থেকে পানি এনে পান করতেন। রান্নার কাজসহ আনুষাঙ্গিক কাজে ব্যবহার করতেন তিনি। বিষয়টির সত্যতা জানার পর স্মাইল ইন লাইফ নামের সংগঠনটি তার বাড়িতে টিউবওয়েল উপহার দিয়েছেন। আর এই টিউবওয়েল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ছকিনা বেওয়া। শুধু ছকিনা বেওয়ায় নন, তার মতো আরও প্রায় দুই শতাধিক অসহায় পরিবারসহ গ্রামের বিভিন্ন মোড়, মাঠের মধ্যে কৃষকদের পানি পানের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন সংগঠনটি।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তার ধারে কিংবা মোড়ে, মসজিদের সাথে, কবরস্থানে এমনকি মাঠে কৃষকদের প্রয়োজনেও এই সংস্থার উদ্যোগে স্থাপন করা টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ফুটস্টেপস বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. বাপ্পি মিরপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের জিকে ক্যানেল মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে প্রজেক্ট তৃষ্ণার নলকূপ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ থেকে আগত কৃষক কিংবা পথচারীরা এসে এখান থেকে পানি পান করছেন। সেখানে স্থাপন করা টিউবওয়েলের হ্যান্ডেলের সাথে রাখা আছে একটি মগ। সেই মগে করে মানুষ খাচ্ছে আবার সেখানেই রেখে দিচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েন স্থানীয়রা।

আবুল কাশেম নামের এক কৃষক বলেন, মাঠে কাজ করার সময় প্রচণ্ড গরমে অনেক তৃষ্ণা লাগে। তখন একটু পায়ে হেটে এসে এখান থেকে পানি পান করার পর বুকটা জুড়িয়ে যায়। এই মাঠের কোনে ক্যানেলের ধারে যারা এই টিউবওয়েল দিয়েছে তাদের যেন মঙ্গল হয় বলেও দোয়া করেন সেই কৃষক।

স্মাইল ইন লাইফের সভাপতি মো. বাপ্পী বলেন, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় কিছু অসহায় মানুষ আছেন, যাদের কাছে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করার মতো সামর্থ্য নেই। তারা দিনের পর দিন অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে পান করেন। যাদের বাড়িতে টিউবওয়েল না থাকায় অন্যের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসেন এমন একটি তথ্য আমার কাছে আসলে আমি দ্রুত তাদের জন্য টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করার জন্য উদ্যোগ নিই।

তিনি বলেন, আমি চাই এমন মানুষগুলোর জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে। আমার এ সামাজিক কর্মকাণ্ড একটি চলমান প্রক্রিয়া। টিউবওয়েল দেওয়ার পাশাপাশি যখনই মানুষের অসহায় জীবনের কথা শুনেছি তখনই চেষ্টা করেছি তাদের জন্য কিছু করার। সবাই দোয়া করবেন যেন এ কাজ চালিয়ে যেতে পারি।

তিনি আরও বলেন, পানির অপর নাম জীবন। এই কথাটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে প্রতিদিন পানির প্রয়োজন রয়েছে। খাবার ছাড়া জীবনধারণ করা কষ্টকর, কিন্তু পানি ছাড়া জীবন ধারণ করা অসম্ভব। মানুষসহ প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য পানির প্রয়োজন অপরিহার্য। আমাদের ফুটস্টেপস বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনটির সার্বিক সহযোগিতায় ‘প্রজেক্ট তৃষ্ণা’ মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮৭ টি টিউবওয়েল স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এএসএম মুসা কবির বলেন, শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে পানির ভূমিকা অপরিসীম। পানি আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। পানি শরীরের কিডনিতে পাথর হওয়া থেকেও প্রতিহত করে। পানি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কিন্তু শরীর পানিশূন্য হয়ে গেলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এর ইমব্যালেন্স হতে পারে। এতে করে তীব্র মাথাব্যথা হয়ে থাকে অনেকেরই। তাই তীব্র জ্বরের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিৎ।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় বলেন,
মানুষ জলে অভ্যস্থ। প্রাণি জলে অভ্যস্থ। জল ছাড়া জীবের অস্তিত্ব থাকে না। বাংলাদেশ এবং তার বাঙালির জীবন ও সৃষ্টির পরিক্রমার সূত্র এবং স্থিতি জলকে ধারণ করে। আমাদের দেশটা জন্ম নিয়েছে জলকে ধারণ করে। এক সময় যে জল আমাদের অতিরিক্ত ছিল, এখন সে জল আমাদের অভাবের। আমাদের অনেক নদী আছে, এখন নেই কেবল এতটুকু জল। ভিজা মাটির বাংলাদেশ এগোচ্ছে মরুময়-বালুময়তার দিকে। আমাদের পানি চুক্তিতে জল বন্টন যে কমিটমেন্ট আছে তার পাওনাটা আদায় করা গেলে দেশের কৃষি, মাটি,বন, পশু-পাখি,বৃক্ষ, তৃণ-লতা, মাছ, কীট-পতঙ্গ সাবলিল জীবন ফিরে পেত। স্বাবলম্বী হতো আমাদের অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা,যোগাযোগ ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি।
আমরা প্রয়োজনে যে ধারায় ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার করে চলেছি তারজন্য আমাদের অস্তিত্ব ঝুঁকি গতি পাচ্ছে। আমাদের ভূ-উপরি জলের সংরক্ষণ ও সদ্ ব্যবহার করতে না পেরে অযত্ন আর অবহেলায় তা নষ্ট করেই চলেছি।
এখন সময় এসেছে,জল ব্যবহার ও সংরক্ষণ সূত্রে সবাইকে আবদ্ধ করা। নচেৎ জলের জন্য আমরা উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হবো অচিরেই।

ফুটস্টেপস বাংলাদেশ নামের সংগঠনের প্রধান শাহ রাফায়াত চৌধুরী বলেন, সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য আমাদের প্রত্যেকের চাহিদামত বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমরা মূলত সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করেছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের শুধু পানিই পৌঁছে দেওয়া হয়নি, তাদের সামাজিক ও আর্থিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে।

তিনি বলেন, শুরুতে আমরা আমাদের সংগঠনের মাধমে গতানুগতিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ, খাবার ইত্যাদি দিয়ে মানুষকে সাহায্য করতাম। কিন্তু কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম এভাবে কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যিনি এ বছর কম্বল নিচ্ছেন, পরের বছর ওই ব্যক্তিই আবার কম্বল নিতে আসছেন। তখন থেকেই ‘তৃষ্ণা প্রজেক্ট’ চালু করি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা মানুষকে বিশুদ্ধ পানি পান করাতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা নিয়ে কাজ করছি।

প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করলে আমাদের পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের পানি শূন্যতাও দূর হয়। ফলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হয় এবং শক্তিও ফিরে আসে। পানি রক্ত ও রক্ত কণিকায় অক্সিজেন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। তাই সকলেরই বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *