সারাদেশ

রমজানে নজরুলের বিখ্যাত গজল ‘হে নামাজী’ নিয়ে পাভেল-নিরব

ডেস্ক রিপোর্ট: পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মমতা শংকর। দশকের পর দশক শুধু কাজ দিয়ে মানুষের মনই ভরিয়েছেন। অথচ এই পরিণত বয়সে এসেও তিনি রেহাই পেলেন না ট্রলের হাত থেকে! একটি মন্তব্যের জন্য তার মতো গুণীকেও ছাড় দেওয়া হলো না!

সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেয়েদের শাড়ি পরা নিয়ে মন্তব্যটি করেছিলেন এই তারকা। এর পর থেকেই তার মন্তব্যটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে লেখক, সমাজকর্মী-সবাই মমতা শংকরের ওই মন্তব্যে তীব্র বিরোধিতা করেন।

আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে মমতা শংকরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নতুন প্রজন্মের নারীদের সাজ নিয়ে তার কী ভাবনাচিন্তা? উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, ‘আজকাল শাড়ি পরব, কিন্তু আঁচল ঠিক থাকবে না! ঠিক বুঝতে পারি না। আগে যাদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যারা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন, তারা ওই ভাবে দাঁড়াতেন।’

একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামে মহিলাদের কাজ করতে গিয়ে হয়তো আঁচল সরে যেত। তাতে কোনো দোষ ছিল না। আর ওরা (যৌনকর্মী) তো পেশার তাগিদে পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য ওভাবে শাড়ি পরে থাকেন।’ অভিনেত্রীর এই বক্তব্য নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক।

মমতা শংকর মেয়েদের শাড়ি পরার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ‘মেয়েরা ওভাবে শাড়ি পরবে, তারপরে ছেলেরা কিছু বললে রেগে যায়। বলবে মেয়েদের অসম্মান করা হচ্ছে। মেয়েদের একটা শালীনতার জায়গা আছে, যা দেখে ছেলেরা সম্মান করবে। আমাদের নিজেদের যদি এই মর্যাদা না থাকে, তা হলে ছেলেরা সম্মান করবে কীভাবে! আমি এর প্রতিবাদ করছি। প্রথম দেখাতেই তো একটা ধারণা তৈরি হয়। আমি হয়তো খুব ভালো মেয়ে, কিন্তু শাড়িটা ওই ভাবে আমি পরব কেন? নিজেকে ওভাবে দেখাতে যাব কেন!’

তসলিমা নাসরীন মমতা শংকরের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন লেখক তসলিমা নাসরীন। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার নামী নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী মমতা শংকর মেয়েদের শালীনতা বজায় রাখতে বলেছেন, তা না হলে পুরুষেরা মেয়েদের খারাপ ভাববে-এই যুক্তি দিয়ে। যে পুরুষেরা মনে করে মেয়েদের শালীনতা নির্ভর করে মেয়েরা কাপড়চোপড় দিয়ে শরীর কতটা ঢাকল তার ওপর, সেই পুরুষদের তিরস্কার না করে মমতা শংকর তিরস্কার করছেন মেয়েদের। তিরস্কার করে তিনি যে পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক- সেটাই প্রমাণ করলেন।’

শ্রীলেখা মিত্র অন্যদিকে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র অবশ্য মনে করেন ঢালাও সমালোচনার আগে অভিনেত্রী কী বলেছেন, সেটা বোঝা জরুরি। তার মতে, মমতা শংকরের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘মমতা শংকরকে ট্রল করার আগে উনি ঠিক কী বলতে চেয়েছেন, সেটা বোঝা উচিত। আমি নিশ্চিত, উনি লাইসেন্সড যৌনকর্মীদের অসম্মান করতে চাননি।’ এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রীলেখা বলেন, ‘বুঝতে হবে উনি কোন প্রজন্মের মানুষ। তাকে হঠাৎ করেই কেউ যা খুশি বলতে পারেন না। উনি তো সব নারীর উদ্দেশে কিছু বলেননি।’

সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও রূপাঞ্জনা মিত্র মমতা শংকরের বক্তব্য প্রসঙ্গে অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র ফেসবুকে লেখেন, ‘ল্যাম্পপোস্ট বা খুঁটিগুলো এই শহর থেকে অনেক আগে তুলে দেওয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। কারণ, আবার প্রমাণিত হলো যে মেয়েরাই মেয়েদের চরম শত্রু।’

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী কারও নাম না উল্লেখ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হেডলাইন দেখে “পুরোটা বুঝে গেছি” ভাবাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে আমাদের। ধৈর্য জিনিসটা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে! কী বলছি, কাকে বলছি, কার সম্পর্কে বলছি, কীভাবে বলছি -সেই মাত্রাবোধও বিলুপ্তপ্রায়!’
এদিকে মমতা শংকরের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা তৈরি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ডিজিটাল স্কেচ, যেখানে ল্যাম্পপোস্টের নিচে এক নারীকে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকতে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক মডেল আবার শাড়ি পরে ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও মমতা শংকর পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ভাইরাল ডিজিটাল স্কেচটি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘দারুণ হয়েছে, আমিও এ রকম একটা ছবি তুলব ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো খারাপ মেয়েগুলোকে উৎসর্গ করে। শাড়ির আঁচলেই কিনা সব সম্মান লুকিয়ে আছে, যদি ওরা জানত। আমার বন্ধু আলোকচিত্রীরা একটু হাত খালি হলে জানিও।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *