সারাদেশ

অপহৃত ৫ কৃষককে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চান পরিবার

ডেস্ক রিপোর্ট: যে পাকিস্তান আমাদের বাঙালিদের বুকে গুলি চালিয়েছিল তারাও আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।

শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী দক্ষিণ কাট্টলিতে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারা বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। একমাত্র ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে একটা পাকিস্তানী পতাকা ছিল। আর সেদিন একজন ব্যক্তি পাকিস্তানের নির্দেশে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে সোয়াদ জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে গিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যে অস্ত্র আনা হয়েছিল বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করার জন্য। একদিকে গৌরবের আরেক দিকে দুঃখের।

তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতায় চট্টগ্রামের ভূমিকা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতাটা ঘোষণা করেছিলেন সেটির বার্তা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এবং তখন কালু্ঘারট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ পাঠ করা হয়েছে। আমাদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্নজন সেটি পাঠ করেছেন। আমরা তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। ছয় দফা আন্দোলনের সূচনা হয়েছে এই চট্টগ্রাম থেকে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনেও চট্টগ্রামের অবদান।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির কথা ভেবে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর যখন ৫৬ ভাগ মানুষের ভাষাকে তারা (পাকিস্তান) স্বীকৃতি দিতে চায়নি, তখনই বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন এদেশে পাকিস্তানি শোষণ চলবে। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির কথা ভেবে, তিনি ১৯৪৮ সালেই ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে ৬৬’র ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। 

তিনি দুঃখ করে বলেন, আমাদের দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজকে স্বাধীনতার পর বাপ দাদার খবর নাই তেল কুড়ানোর নাতি তারা হয়ে গেলেন স্বাধীনতার ঘোষক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার পর তারা স্বঘোষিতভাবে কি হয়নি, সবই হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কারণে দেশের অপরাজিত শক্তিকে প্রতিহত করে দেশ আজ স্বাধীনতার চেতনায় ফেরত আসছে।

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এই দেশে ২৯ বছর ক্ষমতা পরিচালনা করেছে। এই ২৯ বছরের চট্টগ্রামের বা বাংলাদেশের কি উন্নয়ন হয়েছে! আর বঙ্গবন্ধু ৩ বছর এবং তার কন্যা প্রায় ২০ বছর এই ২৩ বছরে বাংলাদেশের স্বপক্ষে শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের শক্তি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কি হয়েছে সেটা হিসাব করলে বুঝা যাবে। আর ওই যে ওরা বাংলাদেশকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। মুখে মানলেও তারা অন্তরে মেনে নিতে পারেনি। তারা এখনো সেই পরাজের গ্লানি ভুলতে পারে নাই। আর আমরা বিজয়ের আনন্দে সব ভুলে গিয়েছিলাম। যারা দেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তাদের প্রতি ঘৃণা জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নাই।’

মুক্তিযোদ্ধারের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা জয় বাংলা বলব আর আমাদের ছেলে-মেয়ে ভাই-ভাগিনা পরবর্তী বংশধররা আর একটা বলবে। এটাও কিন্তু আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়। এ কথাটা মনে রাখতে হবে আমার সন্তান আমার পাশে থাকবে না! এটা হয় না।

এসময় সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংসদের জেলা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) সরোয়ার কামাল, মহানগর ইউনিট কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস.এম শফিউল্লাহ্, সিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সেবা) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত আরা চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু ও এস.এম আল মামুন প্রমূখ।

এর আগে মন্ত্রী নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীর ৩০ শতক জায়গার ওপর প্রস্তাবিত নতুন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের জায়গায় নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে সেখানে প্রথমবারের মতো বীর শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *