সারাদেশ

ফোন করা ব্যক্তি দস্যুদের প্রতিনিধি, নিশ্চিত হয়েছে জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষ

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজ থেকে ফোন করা ব্যক্তি জলদস্যুদের সত্যিকারের প্রতিনিধি সেটি নিশ্চিত হয়েছে মালিকপক্ষ। বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় গত বুধবার (২০ মার্চ) প্রথমবারের মতো ফোন করা হয়। এরপর আরও আলোচনা হয় তাদের সঙ্গে। এর মধ্যে দিয়ে ফোনটা যে দস্যুদের পক্ষ থেকে এসেছে সেটি শতভাগ নিশ্চিত হতে পেরেছে মালিকপক্ষ।

জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বার্তা২৪.কমের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে শুরুতে ধোঁয়াশা থাকে। তবে পরবর্তীতে আলোচনার ফলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি দস্যুদের পক্ষ থেকেই যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ বা দাবি-দাওয়ার বিষয়ে এখনো কিছু বলা হয়নি।’

প্রায় ১৪ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই মালিকের মালিকানাধীন এমভি জাহান মণি নামের আরও একটি জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়েছিল। বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই জাহাজটি জলদস্যু-আক্রান্ত হওয়ার সাত দিন পর মুক্তিপণ চাওয়া হয়। আর ৪০ দিনের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যায়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে অপহরণের শিকার ২৫ জন নাবিকসহ জাহাজটি ছাড়া হয় ৯৯ দিনের মধ্যে। তবে তার আগে জাহাজ জিম্মির সুযোগ নিয়ে কিছু ঠকবাজ জুটে গিয়েছিল। বিশেষ করে ‘পানি শাহ’ নামের এক প্রতারক ঐশ্বরিক ক্ষমতায় নদীপথে সোমালিয়া পৌঁছে গেছেন জানিয়ে বিভ্রান্ত করেছিল জাহাজের মালিকপক্ষকে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরে তার কললিস্ট যাচাই করে দেখতে পায়, সোমালিয়া নয় ফোনটা করা হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থেকে। এছাড়াও আরও এক প্রভাবশালী ব্যক্তিও বিভ্রান্ত করেছিল মালিকপক্ষকে। স্বাভাবিকভাবে তাই এবার দস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর কিছুটা সন্দেহবাতী ছিল। যদিও পরে সেটি কেটে যায়।

এদিকে শনিবার জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাজের মালিকপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে প্রতিষ্ঠানটি কার্যালয়ে একসঙ্গে ইফতারও করেন তারা। এ সময় নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় দ্রুত ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করা হয়।

১২ মার্চ সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে জলদস্যুরা। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকই বাংলাদেশি। জাহাজটি পরে নিজেদের উপকূলে নিয়ে যায় দস্যুরা। এরপর কয়েক দফায় জাহাজটি সরিয়ে নেয় তারা। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙরে করা আছে।

মালিকপক্ষ আলোচনার মধ্যে দিয়ে নাবিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে শুরু থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর অদূরে একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্স। গত বৃহস্পতিবার রাতে ইইউ নেভাল ফোর্সের এক্স অ্যাকাউন্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তাদের হেলিকপ্টারও জিম্মি জাহাজ ঘিরে চক্কর দিয়েছে। যদিও সেখানে সামরিক অভিযানে আপত্তি জানিয়ে আসছে মালিকপক্ষ।

এ বিষয়ে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, নাবিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। সেজন্য আমরা কোনো ধরণের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করছি না। আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্যে দিয়ে নাবিকদের মুক্ত করতে চাই।

এখন কি আলোচনায় নাবিকদের মুক্তি মিলবে, নাকি সামরিক অভিযানে খুলবে মুক্তির জট-সেদিকে তাকিয়ে নাবিকদের পরিবার, মালিকপক্ষ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *