সারাদেশ

দুই দশক ধরে অকেজো দেশসেরা কলেজের টেলিস্কোপ

ডেস্ক রিপোর্ট: মানুষ সবসময়ই পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরের কক্ষপথ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। বিশেষ করে চন্দ্র ও গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে মানুষের আগ্রহ বহু পুরনো। টেলিস্কোপের আবির্ভাবের ফলে আমরা মহাকাশের অনেক রহস্যের সমাধান করতে পেরেছি। আজ, আমাদের কাছে মহাকাশের অনেক তথ্য রয়েছে যা টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পরেই সামনে এসেছে। তাই টেলিস্কোপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তো বটেই বিজ্ঞানমনস্ক যে কারোরই মনে ভাবনার সৃষ্টি করে সৌরজগৎ সম্পর্কিত আলোচনা। আর পৃথিবী থেকেই যদি নিজ চোখে দেখা যায় মহাকাশের, তবে পুস্তকের পাঠকে পূর্ণতা দেয় বাস্তবিক জ্ঞান।

টেলিস্কোপ হল শক্তিশালী যন্ত্র। যা আকাশে দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। তারা আমাদের খালি চোখে যতটা সম্ভব তার চেয়ে বেশি দূরে দেখতে দেয়, আমাদের তারা, গ্রহ, গ্যালাক্সি এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুকে আরো বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করতে দেয়।

টেলিস্কোপ জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই যন্ত্র ব্যবহার করে মহাকাশের বস্তুর দূরত্ব, আকার, গঠন এবং গতি সম্পর্কে জানতো। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের, টেলিস্কোপ গুলি রাতের আকাশ অন্বেষণ এবং এর গোপনীয়তা উন্মোচনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করতেন।

তবে লাল দালানের রাজশাহী কলেজ থেকেও একটা সময় দেখা মিলতো মহাজাগতিক গ্রহ-নক্ষত্রের। কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দুইটি টেলিস্কোপ দিয়ে সৌরজগতের বিভিন্ন কক্ষপথ প্রত্যক্ষ করতেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিজ্ঞান চিন্তায় আগ্রহী নানা বয়সী লোকের কাছে জনপ্রিয় ছিল এই টেলিস্কোপ। কিন্তু প্রায় দুই দশক ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণা কাজের এই টেলিস্কোপ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজের পদার্থ ল্যাবে টেলিস্কোপ দুইটি আছে। যন্ত্র দুটির পৃথক লেন্স হারিয়ে যাওয়ায় কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। জার্মানির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই জাতীয় টেলিস্কোপ তৈরি বন্ধ রাখায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও পাওয়া দুষ্কর। বিরাট আকৃতির টেলিস্কোপগুলোর একটির দৈর্ঘ্য ৫ মিটার, অপরটির সাড়ে ৪ মিটার। ১৯৬০ কিংবা সত্তরের দশকে কলেজ প্রশাসন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে এই টেলিস্কোপের ব্যবহার শুরু করে। কলেজের শিক্ষার্থীদের বাইরেও টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র দেখার ব্যবস্থা করা হতো সর্বসাধারণের জন্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকবছর আগে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাদ থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে ভারতের বহরমপুর এলাকাও দৃষ্টিগোচর হতো। তবে বর্তমানে লেন্স জটিলতার কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে যন্ত্র দুটি। প্রয়োজন থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না নিজ চোখে মহাজাগতিক ঘটনা কিংবা গ্রহ-নক্ষত্র দেখার।

জানতে চাইলে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলাউদ্দিন বলেন, এক সময় প্রয়োজন সাপেক্ষে কলেজের শিক্ষার্থীরা এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করত। পাশাপাশি এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিভিন্ন মহাজাগতিক ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করত। এখনও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আসলে এই টেলিস্কোপের খোঁজ নেন, দেখতে চান। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এগুলোর যে ব্যবহার, মহাকাশের বিভিন্ন উপগ্রহ বিশেষ করে চাঁদ এবং শনি দেখা যেত, সেগুলো আর দেখানো যায় না। তবে বড় টেলিস্কোপের অবজেক্টিভ লেন্স ঠিক আছে কিন্তু তার আই পিসের লেন্সগুলো অনেক খোঁজাখুজির পরও ল্যাবে পাওয়া যায়নি। যে কারণে ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের টেলিস্কোপটা ব্যবহার করা যায় না। আর অন্যটার অবজেক্টিভ লেন্স অচল হয়ে আছে, যে কারণে বড় বড় এই দুটো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছি না। কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে রিপ্লেস বা অন্তত একটা টেলিস্কোপ সচল করা যায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের আছে।

মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওলিউর রহমান বাবুর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, রাজশাহী কলেজে অনেক পুরাতন কিছু জিনিস আছে যেগুলো আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য হলেও সংরক্ষণ করা উচিত। তারমধ্যে একটি এই টেলিস্কোপ। এটি একসময় শুধু রাজশাহী কেন সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি কথা ছিল যে রাজশাহী কলেজ থেকে ভারতীয় সীমান্তের ওই প্রান্তের শহরগুলো দেখা যায়। আমি তখন খুব ছোট্ট ছিলাম। এই যন্ত্র দিয়ে কি হয় সেটা আমিও দেখতে আসতাম।এটা দিয়ে আমরা তারা-চাঁদ দেখেছি। মনে হতো যেন অন্য কোনো জগতে চলে গিয়েছি।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ আল মাসুদ বলেন, পদার্থবিজ্ঞানে জোতির্বিদ্যা বা মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এক্ষেত্রে একটা টেলিস্কোপ খুবই দরকার। এখানে একটা টেলিস্কোপ আছে, কিন্তু আমরা এর ব্যবহার করতে পারি না। অনেক সময় চন্দ্রগ্রহণ হয় এগুলো দেখতে পারি না। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ হিসেবে একটা ভালো টেলিস্কোপ থাকা খুবই দরকার।

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, টেলিস্কোপ সচল না থাকায় শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তবে যে যন্ত্রাংশগুলোর জন্য অকেজো হয়ে আছে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। কিন্তু যে কোম্পানি লেন্স দুটো তৈরি করেছে তারা আর এই টেলিস্কোপ বাজারে দিচ্ছে না। তাই চালু করতে অসুবিধা হচ্ছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে নতুন একটা টেলিস্কোপ কিনে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *