সারাদেশ

যাদের জন্য স্বাধীনতা, তারাই আজ কোণঠাসা: দুদু

ডেস্ক রিপোর্ট: বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, সরকার আমাদের দলে একটা বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে, সরকারের এটা করা উচিত না। আমাদের দল ধ্বংস হয়ে গেলে সরকারও সুখে থাকবে না।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) জাপার বনানী কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি তা সংসদে বিস্তারিতভাবেই বলেছি। নির্বাচন ইস্যুতে খবরের কাগজে নিবন্ধও লিখেছি। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দলের কিছু লোক কথা বলেনা। তাই দীর্ঘদিন ধরেই দল হিসেবে আমরা সংসদে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, দেশের সব ক্ষমতা যদি জনগণের হয় তাহলে তারাই নির্বাচন করবে জনপ্রতিনিধি। দেশের মানুষের কি ভোটাধিকার আছে? আমরা বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজ চেয়েছিলাম, যেখানে সবার জবাবদিহিতা থাকবে। কেন জিনিসপত্রের দাম কমছে না? কেন প্রতিদিনের লাগা আগুন বন্ধ করতে পারছে না? কেন ভেজাল বন্ধ করতে পারছে না? কারণ হচ্ছে, কোথাও জাবাবদিহিতা নেই। গণতন্ত্রের বড় অবদান হচ্ছে আইনের চোখে সবাই সমান হবে।

তিনি বলেন, এখন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। আইন করা আছে, সরকারের সমালোচনা করলেই আইন মাফিক মামলা হয়। বৈধভাবেই আমাদের দাবিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এটা কোন স্বাধীন দেশে হতে পারে? মানুষের মুখ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাঙ্খিত সমাজ নির্মাণ হয়নি এবং আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। আমরা উল্টোপথে চলছি। বেশিরভাগ মানুষই অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ জানে না, কাল তার বাড়িটি দখল হয়ে গেলে বিচারের জন্য কার কাছে যাবে। এমন অসংখ্য অভিযোগ আমরা জানতে পারছি।

তিনি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় দেশের রাজনীতি চলছে, তাতে দেশের কোনো আদর্শিক রাজনৈতিক দল টিকবে না। এতে যৌক্তিক রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। শুধু সরকার হিসেবেই আওয়ামী লীগ ঠিক আছে, কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যে চরিত্র হওয়ার কথা তা থেকে তারা দূরে সরে গেছে। সামনের দিকে পাপেট ছাড়া রাজনৈতিক দল থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যুক্তির বাইরে কিছু করতে চাইনা, কিন্তু গায়ের জোরে কেউ দাবিয়ে রাখতে চাইলে সেখানে গায়ের জোরের বিকল্প নেই। সবাই সহনশীল হলে, যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব। দেশ ডুবিয়ে দিয়ে, কেউ বিদেশে গিয়ে সুখে থাকবেন- তা হবে না। দেশের মানুষের অভিশাপ থেকে কেউ মাফ পাবে না। দেশকে বাঁচাতেই হবে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রামে গ্রামে লোক পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করেছিলেন। সেই তালিকায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেছে। এখন সেই তালিকা কয়েকগুণ বড় হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের লোকের নাম ঢুকাতেই নতুন করে বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যাকে ইচ্ছে তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢুকিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকা মানে, নতুন আরো কিছু লোক ঢোকানো হবে। দেশে নাকি পঞ্চাশ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আছে। এগুলো বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অংশ নেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, অ্যাডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, শেরীফা কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সুলতান আহমেদ সেলিম, জাতীয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ সোবহান, জাতীয় কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আল মামুন প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন, আনিস উর রহমান খোকন, কাজী আবুল খায়ের, সুলতান মাহমুদ, মাসুদুর রহমান মাসুম, এম এ রাজ্জাক খান।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *