সারাদেশ

জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার উদ্যোগে ঈদ উপহার বিতরণ

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজবাড়ী থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামী আব্দুল জলিলকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোর রাতে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা গেছে, গ্রেফতার আব্দুল জলিল একই ইউনিয়নের মাঝগ্রাম গ্রামের ভ্যান চালক ছহির উদ্দিন ওরফে সরাফত আলীর ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক সদস্য। পুলিশ বলছে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। একই সাথে গরু চুরি ও নারী দিয়ে ব্লাকমেইলসহ মাদক ব্যবসায়ী এবং সীমান্তে চোরাকারবারীদের সাথে সক্ষতা থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে তার বিরুদ্ধে পঞ্চগড়ে গরু চুরি, নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জলিল ও তার বাবাকে আসামি করে আইটিসি ধারায় প্রতারণা মামলা,ঢাকার শ্যামপুর মডেল থানা, ডি.এম.পিতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আর্তসাৎ করার অভিযোগ, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে জলিলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

গত ২০২০ সালে পঞ্চগড় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গরু চুরির মামলা দায়ের হয় জলিলের বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারে জানা যায়, চুরি করা গরু জবাই করে খাওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করলে ১৮ দিন জেল হাজত বাস করেন আব্দুল জলিল।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় রাতে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী থানায় মামলার ওয়ারেন্ট ছিল। সে দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিকেলে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এছাড়া সম্প্রতি পাথর দেয়ার কথা বলে নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইজায়েত রহমান রিফাতের সাথে প্রতারণা করে ৭ লাখ ৮ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সলেমান আলীর মাধ্যমে জলিলের বাড়ি গেলে উল্টো রিফাদকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে রিফাদ নামে এই ব্যক্তি জলিলের বিরুদ্ধে আইটিসি আইনে অর্থ আত্মসাদের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

একই ভাবে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকার ঠিকাদার আসাদুজ্জামান খান ইসা ও মালেকুজ্জামান খান মাসুদ এর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পর জামান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে অর্থ আর্তসাৎ করার অভিযোগ দায়ের করেন।

আরো জানা গেছে, ঢাকার বসুন্ধরা রিভার ভিউ এলাকার পাথর ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামের ৮৫ হাজার টাকা, ঢাকার উত্তর বাড্ডা এলাকার মের্সাস আইলেট প্লাস এর সত্তাধিকারী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের ৯০ হাজার টাকা, গাজিপুর ও ঢাকার পাথর ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, উত্তম খান, শানভি আহম্মেদ, এম এ শাকুল ও মান্না হীরা এবং রন্জিৎ শর্মা সহ অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালালেও কখনো তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে নতুন করে রাজবাড়ী জেলার এক পাথর ব্যাবসায়ীর সাথে প্রতারণা করে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার ওয়ারেন্ট ইস্যুতে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে জলিলকে আটক করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ, বিএনপির যুবদল নেতা পরিচয়ে চুরি ও প্রতারণার পাশাপাশী নারী দেহ ব্যবসায়ীদের নিয়ে এলাকার মানুষদের লোভে ফেলে ফাঁদ তৈরী করে জলিল। একসময় মানুষজনকে আটক করে নান কৌশলে ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করতো। ভুক্তভোগীরা লোক লজ্জার ভয়ে প্রতিবাদ করেনি। এছাড়া এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাঁদাবাজি, ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ তেল পাইপলাইনে চাকুরি দেয়ার কথা বলে অর্থ নিয়ে প্রতারণা করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে আব্দুল জলিল নিজেকে বিএনপি’র নেতা পরিচয় দিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নায়ন অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে প্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) লাইভে করে সমালোচনা ও হেয় করতো।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দেবনগড় ইউনিয়নে নির্মাণাধীন করতোয়া সোলার লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার সুজা মিয়া জানান, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নির্মিত বিদ্যুৎ সোলার পাওয়ার প্লান্টে বিভিন্ন ভাবে বাধা প্রদান করে আব্দুল জলিল। ভূমি অধিগ্রহণ কাজে সে নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয়ে চাঁদা দাবী করতো। যেহেতু দেশের উন্নয়নে এই প্রকল্পের কাজ চলমান, তাই কিছু কাজ এগিয়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এসব বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি বা তেঁতুলিয়া উপজেলা বিএনপি সহ যুবদলের অধিকাংশ নেতা জানলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

দেবনগড় ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব রুবেল ইসলাম জানান, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার নানান অপকর্মের খবর প্রচারিত হওয়ায় সংগঠনের সদস্য সহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি তুলেছি। জরুরী সভা ডেকে আলোচনার মাধ্যমে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দিতে উপজেলা যুবদলের আহব্বায়ক বরাবর স্বারকলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *