আন্তর্জাতিক

আবর্জনা নয়, মশার স্তূপ!

ডেস্ক রিপোর্ট: জুতার বাক্সভর্তি কালো সদৃশ্য জিনিস। ছবি ও ভিডিওতে দূর থেকে প্রথমে দেখে কেউ কেউ ভেবেছেন ময়লা-আবর্জনা। কেউবা আবার মনে করেছেন চা পাতা। তবে আরও কাছাকাছি থেকে দেখতেই ভাঙে সবার ভুল। আসলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মশা। চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের এ ব্লক জামে মসজিদে দরজা জানালা বন্ধ করে স্প্রে করার পর মারা যায় এসব মশা। পরে সেগুলো একজায়গায় জড়ো করে ছবি ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেন মো মুছা নবী নামের এক ব্যক্তি। মুহূর্তেই সেই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

সেই ভিডিও এবং ছবি দেখে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে থাকেন। সবাই বলতে থাকেন, মশার যন্ত্রণায় বাইরে কোথাও এক মিনিট শান্তিতে দাঁড়ানো কিংবা বসা যায় না। ঘরেও দিনরাত মশারির নিচে থাকতে হয়। এখন প্রায় সব বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসের সব মশা মারলেও এমন স্তূপ পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ। কিন্তু মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) যেন কোনো হুশ নেই। দিনে দিনে মশার যন্ত্রণা বেড়ে চললেও দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে এই সংস্থার। সেজন্য মশার সেই ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে অনেকে মেয়র মো. রেজাউল করিমের সমালোচনা করেন। কেউবা বলছেন, মশাগুলো প্যাকেটভর্তি করে সিটি করপোরেশনে পাঠানো হোক, তাতেই হয়তো সম্বিত ফিরবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের।

চট্টগ্রামে গত এক বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১০ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে গড়ে পাঁচজনের একজন শিশু। সবমিলিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ সহস্রাধিক মানুষ। ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু ও আক্রান্ত নিকট অতীতে আর দেখেনি চট্টগ্রাম। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়লে মশা তাড়াতে চসিকের কিছু তোড়জোড় দেখা যায় বটে, কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই আবার ‘ঘুম’। সর্বশেষ গত বছরের ২ অক্টোবর ডেঙ্গু মশার উৎসস্থল ধ্বংসে অভিযান চালিয়েছিল সংস্থাটি। এরপর প্রায় সাত মাস কেটে গেলেও নেই কোনো কার্যক্রম। আর সিটি করপোরেশনের এমন নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন শুধু মশার প্রাদুর্ভাব হলেই তৎপরতা চালিয়ে মশা নিধন করা সম্ভব নয়, এ জন্য দরকার বছরজুড়ে মশক নিধন কার্যক্রম।

তোপের মুখে মেয়র:

রমজানে গরিবদের সঙ্গে ইফতার গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নকাজের চিত্র নিজের ফেসবুক পেজে তুলে ধরছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। কিন্তু মেয়রের এসব ‘ভালো’ কাজও প্রচার পাচ্ছে কম, উল্টো সেসব ছবির নিচে বেশিরভাগই মন্তব্য করছেন মশার যন্ত্রণা নিয়ে। সবারই যেন একটাই চাওয়া, মশা থেকে মুক্তি। সেজন্য কেউ কেউ লিখেছেন, ‘মেয়র মহোদয় উন্নয়ন করতে করতে মশা মারার কথা ভুলে গেলে চলবে না, নগরবাসীকে বাঁচান। মশা থেকে উদ্ধার করেন।’ কেউবা আবার বলছেন, ‘চীনের দুঃখ হোয়াংহো, চট্টলার দুঃখ মশা।’ কেউ কেউ মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে চিঠিও দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। এখন কোথাও কোথাও ঘরে ঘরে জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। জ্বর হলেই মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক কাজ করছে।

বাইরে কোথাও দাঁড়ালে এভাবে ঘিরে ধরছে মশার দল 

এদিকে মেয়রের বিভিন্ন পোস্টের নিচে নগরবাসীর ক্রমাগত মশা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের পর যেন কিছুটা সতর্ক হয়েছে সিটি করপোরেশন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ১টা ২৯ মিনিটে মেয়রের পেজে ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ভবন ও নালায় মশক নির্ধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মানুষ এমন কার্যক্রমের প্রশংসা করলেও ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, শুধু দেখানোর জন্য নয়, শহরের অলি-গলিতে এমন দৃশ্যমান কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চালাতে হবে। তাহলেই মানুষ মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবে।

তবে মশার লার্ভা মারার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অ্যাডাল্টিসাইডের কিছুটা সংকট আছে। অবশ্য ২০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড কেনার প্রক্রিয়া চলছে।’

কেন মশক নিধন কার্যক্রমে গতি নেই:

গত বছর ডেঙ্গুতে বড় ধাক্কার পরও এবার মশক নিধন কার্যক্রমে তেমন একটা গতি দেখা যাচ্ছে না। এই সুযোগে মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। কিন্তু কেন গতি কমে আসছে মশক নিধন কার্যক্রমে সেটি খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, মশক নিধন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের ব্যস্ত রাখা হয়েছে অন্য কাজে। এর ফলে মশক নিধন কার্যক্রম বলতে গেলে থেমেই আছে।

সিটি করপোরেশনের মশা মারার কাজ কী কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরে ১১ মার্চ অফিস আদেশ দিয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীর সই করা ওই আদেশে বলা হয়, মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছিটানো এবং মশা মারার ধোঁয়ার ওষুধ ছিটানোর কাজে নিয়োজিত সেবকদের মূল কাজ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। তাদের দিয়ে আবর্জনাবাহী গাড়ি, নালা পরিষ্কার এবং ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে। এতে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কাজ মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে।

তবে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘জনবল মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। সেজন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে যুক্ত সেবকদের মশা মারার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল।’

নগরবাসী অবশ্য আর কোনো ‘অজুহাত’ শুনতে রাজি নন। তাদের এখন একটাই চাওয়া-‘মশা থেকে আমাদের বাঁচান।’

 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *