ক্ষেতলালজয়পুরহাট জেলা

জয়পুরহাটে বাতিল হচ্ছে ৬১ চালকলের নিবন্ধন

জয়পুরহাট জেলার ৬১টি চালকলের নিবন্ধন বাতিল হচ্ছে। এসব চালকলের খাদ্যশস্যের নিবন্ধন ও চালকলের বিদ্যুৎ–সংযোগও থাকবে না। চলতি আমন মৌসুমে এই চালকলগুলোর মালিকেরা সরকারের সঙ্গে সেদ্ধ চাল সরবরাহের চুক্তি সম্পাদন না করায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়।

চলতি আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে সেদ্ধ চাল সরবরাহের চুক্তি করেনি, এমন ৬৬টি চালকলের মালিককে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারির মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের জন্য নোটিশ দিয়েছিলেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তবে ওই সময়ের মধ্যে পাঁচটি চালকল ছাড়া অন্য চালকলগুলোর মালিকেরা সেই নোটিশে সাড়া দেননি। এখন নীতিমালা অনুযায়ী চাল সরবরাহের চুক্তির বাইরে থাকা চালকলগুলোর নিবন্ধন, খাদ্যশস্যের নিবন্ধন ও বিদ্যুৎ–সংযোগও থাকবে না বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

চলতি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহের আরও এক মাস সময় রয়েছে। ধান-চাল নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ৭৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। তবে উল্টো চিত্র ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে। এই সময়ের মধ্যে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দর বেশি রয়েছে। নিবন্ধন রক্ষায় চালকলের মালিকেরা নিশ্চিত লোকসান জেনেও সেদ্ধ চাল সরবরাহ করেছেন। তবে এই ক্ষেত্র আবার কৃষকদের কোনো ক্ষতির কোনো শঙ্কা নেই। এ কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

একই সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় মোট ৩৬০টি নিবন্ধিত চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি অটো চালকল, অবশিষ্ট হাসকিং চালকল। সরকার চলতি আমন মৌসুমে ৩৩ টাকা কেজি ধান আর ৪৭ টাকা কেজি সেদ্ধ চালের দর নির্ধারণ করে দেয়। গত ১৭ নভেম্বর থেকে আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে। আমন মৌসুমে ১৩ হাজার ৭৮৬ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ৪ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন চাল ও ১৮০ মেট্রিক ধান সংগ্রহ হয়েছে। চলতি আমনে মৌসুমে ৬৬টি চালকলমালিক সরকারের সঙ্গে সেদ্ধ চাল সরবরাহের চুক্তি করেনি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ১২ জানুয়ারির মধ্যে চাল সরবরাহের চুক্তির সময় বেঁধে দিয়ে ৬৬ জন চালকলমালিককে ১ জানুয়ারি নোটিশ দেন। ওই নোটিশের পর মাত্র ৫টি চালকলের মালিক চাল সরবরাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে আবেদন করেছেন।

চুক্তির বাইরে থাকা তিনজন চালকলের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যদি এক বছর চাল সরবরাহে লাভ হয়, তাহলে আবার পরের বছরে লোকসান গুনতে হয়। নিবন্ধন বাতিলের ভয়ে বছরের পর বছর লোকসান দেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান চাল সরবরাহে প্রতি কেজিতে চার-পাঁচ টাকা লোকসান হবে। এ কারণে তাঁরা চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি।

অন্য মিলমালিকেরা তো চুক্তি করেছেন—এমন প্রশ্নে তাঁরা বলেন, ‘যাঁদের টাকা আছে, তাঁরা চুক্তি করেছেন। তাঁরা ছোট মিলার, এ জন্য করেননি।’ তাঁরা চালকলের নিবন্ধন বাতিলের ভয় করেন না বলেও জানান।

আক্কেলপুর উপজেলার মাহিন চালকলের মালিক গোলাম মোস্তফা বিদ্যুৎ বলেন, ‘আমার মিলের নামে বরাদ্দ করা ৮৮ মেট্রিক টন চাল সরকারকে দেওয়ার জন্য চুক্তিপত্র করেছিলাম। প্রায় দুই লাখ টাকা লোকসান মাথায় রেখে পুরো বরাদ্দের চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছি।’

কালাইয়ের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করার ইচ্ছা ছিল। খোঁজ নিয়ে দেখি, সরকারি গুদামের চেয়ে বাজারের ধানের দাম বেশি। তাই বাজারে ধান বিক্রি করেছি।’

জয়পুরহাট চালকল মালিক সমিতির সভাপতি কে এম লায়েক আলী বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি। যদি প্রতি কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা দাম কম থাকত, তাহলেও একটা কথা ছিল। লোকসান মেনে সবাই তো ব্যবসা করতে চাইবে না, এটাই সত্য। ৬১ জন চালকলের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানেন না। যখন বাতিল করবে, তখন কী করণীয়, তা সমিতি ঠিক করবে।

জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেন, চলতি আমন মৌসুমে ৬৬ জন চালকলের মালিক সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেননি। এসব চালকলমালিককে চুক্তি করার জন্য সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র পাঁচজন চালকলমালিক চাল সরবরাহে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের চাল সরবরাহের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। যে ৬১ জন চালকলের মালিক চুক্তি করেননি, মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী এমনিতেই সেই সব চালকলের নিবন্ধন, বিদ্যুৎ–সংযোগ ও খাদ্যশস্যের নিবন্ধন বাতিল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *