আন্তর্জাতিক

স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন পিরোজপুরের পুরাকীর্তি মসজিদ

ডেস্ক রিপোর্ট: মোগল আমলের স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌর শহরের মিয়াবাড়ির পৌনে ৪শ বছরের প্রাচীন পুরাকীর্তি মসজিদ। উপজেলার পোনানদী পাড় জুড়ে মিয়া বাড়ীর সামনে এ মসজিদটি অবস্থিত। চমৎকার নির্মাণশৈলীর এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি মুঘল আমলের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক এই মসজিদটি দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন।

স্থানীয় আবুল কালাম আজাদ নামের এক মুসল্লি জানান, কয়েক বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরাকীর্তি মসজিদটি সংস্কার করে। এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সংরক্ষিত প্রাচীন এ পুরাকীর্তি মিয়াবাড়ি মসজিদ সংস্কার শেষে উদ্বোধন করেন। ৩০ ফুট লম্বা এবং ১৭ ফুট চওড়া। এই মসজিদটি ১৬শ খৃষ্টাব্দের শেষের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদটি ছাড়াও এ উপজেলায় স্থানীয় কাজী বাড়ি, ভান্ডারিয়ায় থানার পিছনে ও ভেলাই চোপদারের বাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরণের আরও ৬টি মসজিদ রয়েছে। যা এখনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে।

সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদ গুলোর দেয়ালে লাল ইট আর চুনা পাথরের মিশ্রণের কাজে দিল্লির লাল ইটের স্থাপত্যরীতির প্রভাব রয়েছে। এর দেয়ালগুলোতে রয়েছে ইটের বিন্যাস, পোড়ামাটির ফলকের কাজ। ছাদের গম্বুজ ও খিলানে এক সময় ছিল সোনালি প্রলেপের কাজ। তবে বর্তমানে তা আর চোখে পড়ে না। রেলিং প্রাচীরে ঘেরা ছোট্ট সুন্দর এই মসজিদগুলোতে মিহরাব এবং এক গম্বুজের ভেতরের অংশ পাথরের ফুল, চমৎকার লতাপাতা ও আরব্য নকশায় খোদাইকৃত। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে পোড়ামাটির নকশার কাজ, যা মোগল ও স্থানীয় শিল্পরীতির নিপুণ সমন্বয়। ভেতরের চমৎকার ফুলেল নকশায় নির্মিত মসজিদটি নামাজের কাজ ছাড়াও বিচারকার্য এবং সভা পরিচালনার কাজেও ব্যবহৃত হতো ।

স্থানীয় মিয়াবাড়ির বাসিন্দা তমিজ উদ্দিন কাজল জানান, পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামে একটি প্রাচীন দিঘি রয়েছে। ভেলাই চোকদার নামক একজন ধনাঢ্য জমিদার আনুমানিক পাঁচ একর জমির উপর মোগল আমলে এ দিঘিটি খনন করেন। ভান্ডারিয়া কৃতি সন্তান, সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পারিবারিক উদ্যোগে এ দিঘিটি সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করেন। এ দিঘির পাড়ে ভেলাই চোকদার নির্মিত একটি মসজিদসহ দটি দালান প্রাচীন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব মসজিদ জমিদার ভেলাই চোকদারের আমলে তার নির্মিত হয়েছে। যদিও এই মসজিদগুলোর নির্মাণকাল বা নির্মাতার নিশ্চিত পরিচয় জানা যায়নি, তারপরেও স্থাপনারীতি এবং এই সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণে ধারণা করা হয় যে মোগল আমলের শেষদিকে সম্ভবত এই স্থাপনাগুলি নির্মিত হয়ে ছিলো।

উল্লেখ্য: এই মসজিদের চার পাশ ঘিরে রয়েছে ফুল বাগান ও তার সামনে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরটিও বাধিঁয়ে ও লাইটিং দিয়ে দৃষ্টি নন্দন করা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে মিয়াবাড়ি প্রাচীন মসজিদটির সংস্কার পূর্বক সংরক্ষিত পুরাকীর্তি মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *