সারাদেশ

অনুপ্রবেশের দায়ে ৩ বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিএসএফ

ডেস্ক রিপোর্ট: তুরস্কে সেনাবাহিনীর অধীনে লোক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার দুই প্রতারক সম্পর্কে বাবা-ছেলে। তারা হলেন কামরুল হাসান (৬৫) ও মো.ফাহাদ হাসান সিয়াম (২৭)।

ডিবি বলছে, বাবা-ছেলের প্রতারণা চক্র কখনো তুরস্কের সেনাবাহিনীতে, আবার কখনো মালয়েশিয়া, কানাডা ও বিভিন্ন দেশের চাকরি দেওয়ার নাম করে দেড় হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা।

ভুয়া এজেন্সি খুলে তারা এসব প্রতারণা করতেন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের সহিদুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ জনের ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ার পর তদন্তে নেমে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪ টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুইটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ কর হয়।

শনিবার (৩০ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরঞ্জের অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিন) বিভাগ।

রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর মিন্টু রোড নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবির হারুন বলেন, তারা সুনামগঞ্জ জেলার ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলামের মাধ্যমে ২০ জনকে তুরস্কের সেনাবাহিনীতে চাকরী দেবে এবং তাদের পাঠানো হবে বলে প্রতিজনকে কাছ ৭ লাখ টাকা করে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ করে দিতে হবে। কিন্তু কাউকে পাঠাতে পারেনি। তাদের কাছে টাকা নেয়ার পর মেডিকেল করার কিছু দিন পর বাপ ছেলে তাদের ২০ জনের ভুয়া জব অফার লেটার/এগ্রিমেন্ট লেটারে বিভিন্ন তারিখ দিতে শুরু করেন। পরে তুরস্কে যাওয়া বাতিল করে মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে পাঠাবে বলে সহিদুলের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এই পর্যন্ত তিনি একজনকেও বিদেশে পাঠাতে পারেননি।

ডিবির হারুন জানান, কামরুল এক সময়ে একটি এজেন্সিতে জব করতেন। পরে সেই এজেন্সি মালিক মারা গেলে তিনি সেটির মালিক বলে পরিচয় দিতেন। সেই এজেন্সির পাশাপাশি ৪/৫ টি প্রতিষ্ঠান খুলে বৈধ লাইসেন্সধারী বলে পরিচয় দিতেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তার কোন লাইসেন্স ছিল না। ভুয়া লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নিতেন। এইসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারি ভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টদের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। সেই এজেন্সি থেকে কয়েকজনের ভিসা নিয়ে দেখিয়ে প্রমাণ দিতেন কয়েকজনের ভিসা হয়ে গেছে। এগুলো দেখিয়েই পরে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নিতেন তিনি। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সাথে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন। এছাড়াও কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিতেন। একপর্যায়ে গোপনে তিনি তার অফিস পরিবর্তন করে ফেলতেন।

যেভাবে কামরুল প্রতারক হয়ে উঠলেন:

কামরুল হাসানের দাবি, তিনি শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করনে। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি ১০ বছর মালয়েশিয়াতে কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সাল থেকে আল রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিসে চাকরী নেন। ২০২২ সালে মালিক মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানে এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তিনি মারা যাওয়ার পর কামরুল ওই প্রতিষ্ঠানের আরএল ও লাইসেন্স নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন। এইভাবে প্রতারণা করে তিনি তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এই পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ জন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে তাদেরকে মেডিকেল করানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিতেন। ভিসা প্রসেসিং এর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১/২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০/৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়ার তথ্য পেয়েছে ডিবি। তার নিজের পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা শরীয়তপুর উল্লেখ থাকলেও এনআইডিতে স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর দেওয়া। তিনিসহ গত দুই বছরের প্রতারণালব্ধ টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ফ্লাট, বাড়ী ও জমি কিনেছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *