সারাদেশ

শত্রুতার বিষ হাঁসের খামারে: অর্ধ শতাধিক হাঁসের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট: গত দুই বছরের অপূর্ণতা ভুলে ঝালাইয়ের আলোর ঝলকানি আর হাতুড়ির আঘাতের এক কর্মযজ্ঞ পরিবেশ। রং-তুলির আঁচড়ে নতুন করে করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রীর চাপ না থাকলেও ঈদ সামনে রেখে বুড়িগঙ্গা তীরের ডকইয়ার্ডের পুরাতন লঞ্চগুলোকে নতুন সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

তবে আগের মত খুব একটা উৎসব নেই বুড়িগঙ্গাপাড়ের ডকইয়ার্ডে। রমজান আসলে যেখানে শতাধিক লঞ্চ মেরামতে হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দ আর ঝালাইয়ের আলোর ঝলকানি দৃষ্টি কাড়ে দূর থেকে, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি লঞ্চে চলছে ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা। খুব একটা ব্যস্ততা নেই লঞ্চ মেরামত শ্রমিকদেরও।

সরেজমিন সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা তীরের ডকইয়ার্ডের গিয়ে দেখা গেছে, হাতেগোনা কয়েকটি লঞ্চে চলছে মেরামতের কাজ। গুটিকয়েক লঞ্চের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলেও কাঁচারঙের জন্য ভাসতে পারছে না নদীতে। তবে নৌপথে যাত্রীর চাপ না থাকায় দ্রুত লঞ্চ টার্মিনালে ভেড়ানোরও ব্যস্ততা নেই মালিকদের।

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকা থেকে দেশের ২২ জেলা যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল নৌপথ। প্রতিবছর ঈদ উৎসবে কোটি মানুষের বেশি যাতায়াত মাধ্যম ছিল নৌপথ। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে নৌপথের সোনালি সে সময় ফুরিয়েছে। তুলনামূলক কমেছে নৌপথের যাত্রী। বিশেষ করে বরিশাল রুটের ৮০ শতাংশ যাত্রীই এখন যাতায়াত করেন সড়কপথে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে নেই কাঙ্ক্ষিত যাত্রী। ফলে গত দুই মৌসুমেও যাত্রী না পেয়ে লস গুনেছেন লঞ্চমালিকরা।

গত দুই বছর তুলনামূলক সড়কপথে যাত্রী চাপ বাড়লেও এবার নৌপথে ফিরতে পারে আগের জৌলুস এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

প্রিন্স আওলাদ-১০ এর ম্যানেজার আবুল বাশার বলেন, আমাদের লঞ্চ মেরামত চলছে। যাত্রীর চাপ এখনো শুরু হয়নি, তাই কাজে তাড়া নেই।

লঞ্চ মেরামত শ্রমিক কাওসারুল ইসলাম বলেন, আগে রমজান শুরু হলেই আমাদের আর ঘুমানোর সময় থাকত না। কাজের চাপে রাত-দিন শ্রম দিতে হতো। এখন আর সে কাজ নাই। মালিকরা কাজ করায় না। যাত্রী নেই সারাবছর। লঞ্চ চলেও কম। সব মিলিয়ে আমাদের অলস সময় কাটছে। দুই একটা কাজের অর্ডার পেয়েছি। তাড়াহুড়ো নাই।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে, এবারের ঈদে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে এর মধ্যে ৬০ লাখ মানুষই ব্যবহার করতে পারে নৌপথ। তবে পদ্মা সেতুর কারণে সে সম্ভাবনার বাস্তবায়ন কতটা হবে তা অনিশ্চিত।

সম্ভাবনার পথে এখনো অন্ধকার থাকলেও প্রস্তুতির কমতি রাখতে চান না লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এখনো অগ্রিম বুকিং কিংবা যাত্রী আনাগোনা না বাড়লেও পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সেরেছেন বেশিরভাগ লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। ২৫ রমজানের দিকে যাত্রীর ঢল নামবে এমনই প্রত্যাশা তাদের।

সুন্দরবন-১২ লঞ্চের এক কর্মচারী বলেন, এবার সব কিছুর দাম বাড়তি। সড়কপথে ঈদে যানজট বেশি। যাত্রী ভোগান্তিও বেশি। তাই আমাদের বিশ্বাস এবার নৌপথে যাত্রী বাড়বে। তবে ২৫ রমজানের দিকে আমরা যাত্রী পাব একযোগে। এবার স্বপ্ন আছে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী মিলবে।

কর্ণফুলি লঞ্চের সুপারভাইজার বলেন, এখনো অগ্রিম বুকিং পাইনি। ভিআইপি কেবিনগুলোর চাপ বেশি থাকবে। আমরা সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছি। এখন শুধু যাত্রীদের অপেক্ষা।

নৌপথে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নজরদারি থাকবে নৌ রুটগুলোতে, জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।

তিনি বলেন, ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখবে পুলিশ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীগুলো। আমরা তদারকি করব। ১০ দিন মোটরচালিত নৌকা ও বালুবাহী নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে ও পরে ৩ দিন কড়া নজরদারি থাকবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক কাজ করবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *