আন্তর্জাতিক

আসলেই কী মক্কায় মুসল্লি গ্রেফতার হচ্ছে?

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের প্রায় গণমাধ্যমে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সূত্র দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, ‘মক্কা থেকে ৪ হাজার মুসল্লি গ্রেফতার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।’ সাদামাটাভাবে সংবাদটি দেখলে মনে হবে, মানুষ উমরা পালন করতে যেয়ে কিংবা নামাজ পড়তে যেয়ে গণহারে গ্রেফতার হচ্ছেন সৌদি আরবে। কিন্তু আসলে বিষয়টি কী তাই?

মক্কা থেকে প্রধানত গ্রেফতার করা হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির অপরাধে। সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ। সৌদি আরবে গ্রেফতার হওয়া অধিকাংশই পাকিস্তানি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হজ ও উমরায় ভিক্ষুক-পকেটমার না পাঠাতে পাকিস্তানকে সতর্কবার্তাও দিয়েছিল সৌদি আরব।

সৌদি আরব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত ভিক্ষুকদের মধ্যে ৯০ শতাংশ পাকিস্তানের, যারা উমরা ভিসায় দেশটিতে গেছেন। সৌদি আরব বলছে, তাদের কারাগারগুলো পাকিস্তানি বন্দি দিয়ে পরিপূর্ণ। আর সে কারণেই এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। আরব নিউজের খবরে আরও বলা হয়েছে, মক্কার মসজিদে হারামের কাছে থাকা সব পকেটমারও পাকিস্তানের নাগরিক।

এ ছাড়া গ্রেফতার করা হচ্ছে অনুমোদন ছাড়া হুইল চেয়ার দিয়ে টাকার বিনিময়ে উমরা করানো লোকদের। কারণ মসজিদে হারামে উমরাকারীদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সৌদি আরবের প্রচুর লোক রয়েছে। তারা প্রয়োজনমতো আগত যাত্রীদের সেবা দিয়ে থাকে।

মক্কা থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে রাস্তায় মালামাল রেখে বিক্রি করাসহ রাস্তায় কবুতরের খাবার বিক্রির কারণে হাজিদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটানোর অপরাধে। এভাবে রমজান মাসে নেতিবাচক আচরণ করায় কাবা এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার মুসল্লিকে গ্রেফতার করেছে সৌদি আরব।

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, উমরার ভুয়া অফার দিয়ে বিদেশীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ৩৫টি প্রতারক প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধও করে দিয়েছে দেশটির সরকার।

এক কথায়, মক্কায় আগত দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে এবং নিরাপত্তাসহ কাবায় ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেজন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব। এরই অংশ হিসেবে চলছে গ্রেফতার অভিযান।

পবিত্র রমজান মাসে উমরা পালনে ইসলামে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। ফলে বছরের এ সময়ে মুসল্লিদের আনাগোনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ভিড় সামাল দিতে নানা পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রমজান মাসকে উমরার পিক সিজন ধরা হয়। এ সময়ে সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বেশকিছু নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় মুসল্লিদের যেসব হোটেলে নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে।

সৌদি জেনারেল অথরিটি জানিয়েছিল, রমজানের প্রথম ১০ দিনে এক কোটির বেশি মুসল্লি মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করেছেন। সবার মসজিদে আগমন সহজ এবং মুসল্লিরা যেন সুখকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যেতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে উন্নতমানের সেবা দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনায় মুসল্লিদের আহ্বান জানিয়েছে, কাবায় আসার বদলে তারা যেন হোটেলে নামাজের যে ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

এর আগে ভিড় কমাতে এবারের রমজানে একজন মুসল্লিকে শুধুমাত্র একবারই উমরার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি। উমরা করতে সৌদির সরকারি ওয়েবসাইট নুসুকে অনুমতি নিতে হয়। কেউ যখন একবার উমরা করেন তখন সেটি অ্যাপে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। যখন একই ব্যক্তি আবার উমরার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তখন তাকে একটি বার্তা পাঠানো হয়। এতে বলা রমজানে একজন শুধুমাত্র একবারই উমরা করতে পারবেন।

সৌদি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, রমজানের প্রথম ১০ দিনে মোট ৯৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৪ জন মুসল্লি মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা)-এর পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত করেছেন ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০২ জন ধর্মপ্রাণ মানুষ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *