সারাদেশ

চার ঘণ্টা পর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট: বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসলে তা বুয়েট ক্যাম্পাসকে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত করবে বলে মন্তব্য করেছেন। বুয়েটে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের যন্ত্রকৌশল বিভাগের লেভেল-২ (টার্ম-১) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করে বুয়েট প্রশাসন। এই ঘটনার চার বছর না পেরোতেই হাইকোর্টের আদেশে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরতে যাচ্ছে।

আবরার ফাইয়াজ জানান, একজন বুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে নয় বরং আবরার ফাহাদের ভাই হিসেবে বলতে চাই, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসলে তা বুয়েট ক্যাম্পাসকে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত করবে।

কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, ২০০২ এ সনি আপুকে হত্যার পরে খুব বেশিদিন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো না যার ফলাফল দেখি আমরা আরিফ রায়হান দীপের হত্যাকাণ্ডে। তারপরে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। যার সর্বশেষ শিকার আবরার ফাহাদ।

আবরার ফাহাদ হত্যায় যারা আসামি হয় তারা সবাই একটি হলের। কিন্তু প্রতিটি হলেই এরকম ২০-২৫জন করে ছিল যারা নিজেদের হলেও একই রকম হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করতে পারতো। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এরা কেউ কিন্তু পরবর্তীতে আর কিছু করেনি।

গত সাড়ে ৪ বছরে বুয়েটের কোনো জুনিয়র এর গায়ে কোনো সিনিয়র হাত তোলেনি, কেউ কাউকে কোনো নিয়ম বেধে দেয়নি যা দেশের অন্য প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০০ জনই চাইলো যে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসুক তাও বর্তমান ৬০০০ শিক্ষার্থী থাকছে যারা ছাত্র রাজনীতি চাইনা। কিন্তু সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে যদি ছাত্র রাজনীতি চালু করা হয় তাহলে যা হবে:

শত শত আবরার ফাহাদ কিংবা সনিকে হত্যা করা হলেও কেউ প্রতিবাদ করবেনা। কেননা যারা প্রতিবাদ করবে তাদেরকে পেটানোর মানুষদের অভাব থাকবেনা। তারা দাবি জানাতে পারবেনা যে,  ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাই কেননা যদি প্রশাসন করেও নিষিদ্ধ তা আদালতের বিরুদ্ধে যাবে। তাই এরা এক প্রকার ইনডেমনিটি পেয়ে যাবে যে এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারবেনা।

তিনি আরও বলেন, যেখানে ৬০০০ শিক্ষার্থীর মতামত কে মূল্য দেওয়া হচ্ছে না সেখানে এই ১০০-২০০জন কী পরিমাণ বর্বরতা চালাবে কল্পনা করুন। ২০২৭ এই আরেক আবরার পাওয়া যাবে হয়তো? অথবা এবার আর লাশই পাওয়া যাবে না কারণ একভুল দুইবার কেউ করেনা। শিক্ষকরাও কিছু করতে পারবেনা কেননা তারাও নিরাপদ না। ফলাফল ছাত্ররাজনীতি চালুর ২-৩মাসের মধ্যে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত হবে বুয়েট। এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর কোনো আশা আকাঙ্ক্ষা থাকবেনা কেননা তাদের মতামতের মূল্যই তো নেই কারোর কাছে। ঐ অবস্থায় দেশের কোনো অভিভাবক আর নিজের সন্তানকে এখানে পাঠাবে না।

তাই বঙ্গবন্ধু যেই বুয়েটকে নষ্ট করতে নিষেধ করে গেছেন তাকে দয়া করে এরকম ধ্বংস করে দিবেন না।

এদিকে, গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েটে প্রবেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করে বুয়েটের সাধারন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির সিট বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বুয়েটে যে কোনো মূল্যে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে কাজ শুরু করে। এদিকে ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আজও সংবাদ সম্মেলন করেছে বুয়েটের সাধারন শিক্ষার্থীরা।

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চাই না এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’র সদস্য সচিব মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ছাত্র রাজনীতির গৌরবের বেশিরভাগ ইতিহাস আমাদের জন্মের আগের খবর। কোটা সংস্কার আন্দোলন সহ আরো কিছু গৌরব যে নাই, তা না। কিন্ত সেই গৌরবের তুলনায় মারামারি, চাদাবাজি, খুনাখুনি, ধর্ষণ আর নিকৃষ্ট কাজের ভার এত বেশি যে, কোন ভদ্র ও মেধাবী মানুষ রাজনীতি করতে চায় না। একটা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হয়েও আমি বলছি, বুয়েটে কোন রাজনীতি চাই না। এটাই যৌক্তিক, এটাই ন্যায়। আমি বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চাই না।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে বেশকিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মুনতাসির মাহমুদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে গর্ব করার মত কি আছে? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে মারামারি ছাড়া আর কি অর্জন আছে ছাত্র রাজনীতি থেকে? সিলেটে এমসি কলেজই পুড়িয়ে দিয়েছিলো ছাত্রলীগ, ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের ঘটনাও অসংখ্য। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস ছাড়া কোন শিক্ষাঙ্গনে নুন্যতম সুস্থ রাজনীতি নাই। কোথাও ছাত্র সংসদ নাই। শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাজনীতি চর্চার পরিবেশ নাই। এই সত্য কে না জানে? সব ধ্বংস করে দিয়ে বুয়েটও কেন শেষ করে দিতে হবে?

মুনতাসির মাহমুদ আরও বলেন, ‘বুয়েট অবশ্যই ব্যতিক্রম। শুধু মেধাবীদের কারণে না, রাজনৈতিক নোংরামি বুয়েটকে সেভাবে স্পর্শ করতে পারে নাই বলেই বুয়েট ব্যতিক্রম। আল্লাহর ওয়াস্তে এটাকে ধ্বংস করে দিয়েন না। আপনাদের রাজনৈতিক সার্কাস দেখানোর জন্য পুরা দেশ পড়ে আছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পড়ে আছে। দয়া করে বুয়েটের দিকে হাত বাড়ায়েন না। আসুন, আমরা যারা রাজনীতি করি, তারাই একসাথে স্লোগান তুলি, বুয়েটে কোন রাজনীতি নয়।এই সময়ে এটাই হোক আমার এবং আমাদের রাজনীতি।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *