সারাদেশ

চকরিয়ায় শীর্ষ ডাকাতসহ আটক ৪

ডেস্ক রিপোর্ট: কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের নির্মম অপহত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।

একই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ৫টি দাবি জানিয়ে বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর এক দাবিনামা পেশ করেছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁও বন অধিদফতরের সামনে বন কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এসব দাবি জানানো হয় এবং দাবিনামা পেশ করা হয়।

পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের নির্মম মৃত্যুর সংবাদে দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রয়াত সাজাদুজ্জামান ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জ’র রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বনের জমি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমি দস্যুদের নির্মমতার শিকার হন। উখিয়া রেঞ্জের হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) সাজাদুজ্জামানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় আহত হন আরও একজন বন কর্মকর্তা।

দেশজুড়ে একের পর এক বন, পাহাড় ধ্বংস ও হাতিসহ নানা বন্যপ্রাণী হত্যা ও বন উজাড় রোধে যখন কিছু সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে যায়; তখনই তাদের নানা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হতে হয়।

বক্তারা বলেন, এর আগে গত ২০২০ সালে মো: ইউসুফ উদ্দীন নামক মহেশখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা পাহাড় ও বনখেকোর হাতে অপহত্যার শিকার হয়েছিল। সে ঘটনারও সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার এখনও হয়নি। পাহাড় ও বনখেকোদের দমন করতে না পারার ক্রমাগত ব্যর্থতা এসব অপরাধীকে দুর্ধষ ও বেপরোয়া করে চলেছে যার ধারাবাহিকতায় মোঃ ইউসুফ এর পর সাজাদুজ্জামানকে আবারও অপহত্যার শিকার হতে হলো।

এসময় নিহতের ভাই কামরুজ্জামান কাজল বলেন, দুদিন পর সব ঘটনা চাপা পারে যাবে। আরেকটা নতুন ঘটনা ঘটবে। আবার নতুন কেউ প্রাণ হারাবে। এভাবেই চলতে থাকবে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই শুধুমাত্র যে সাজ্জাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের বিচার তা নয়, এই ন্যায় বিচার চাচ্ছি সাজ্জাদ, ইউসুফসহ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যত জন এ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে সমস্ত নির্যাতনের বিচার চাই আমরা। 

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি সাজ্জাদকে হত্যার পর হত্যাকারীরা সেখানে উল্লাস করেছে। আমরা জানতে পেরেছি তারা একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ শেষ করার পরে তারা সেখান থেকে উল্লাস করতে করতে চলে গেছে। আজকে ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার পরেও আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারি নাই। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে শুধুমাত্র যে কক্সবাজারের পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে কেটে নিচ্ছে তা নয়। এই কর্মযোগ্য হত্যাযজ্ঞ সারা বাংলাদেশেই রয়েছে। আজকে এখান থেকে যে আন্দোলনের ডাক আমরা দিয়েছি সেটা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। তাই আমাদেরকে একই সাথে চিন্তা করতে হবে আমরা বন রক্ষার জন্য যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি তাদেরকে আমরা কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পেরেছি। তাদেরকে আমরা ঢাল তরোয়ার কিছুই দেই নাই নিধিরাম সরদার বানিয়ে রেখেছি। তাদেরকে আমরা গাড়ি দিতে পারি নাই যে কয়েকজন একত্রে যাবে। তাদেরকে আমরা ঝুঁকি ভাতা দিতে পারি নাই। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা প্রমোশনের নিশ্চয়তা দিতে পারি নাই।

তিনি বলেন, ইউসুফ হত্যার আজ কয়েক বছর চলে গেল। আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দখলদাররা আবারও নতুন কিছু দখলের জন্য উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। আমরা তাদেরকে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে চাই। এই কারণে আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই যতক্ষণ পর্যন্ত না হত্যাকারীরা কারাগারের অভ্যন্তরে যাবে। আমাদের আন্দোলন মাত্র শুরু হল। রাজপথ আমরা ছাড়ি নাই। হত্যাকারীদের আওতায় আনতে হবে।

এ সময় তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমাদের সহকর্মী সাজ্জাদুজ্জামান কে হত্যা করা হয়েছে সেই হত্যার বিচার অবশ্যই আমি চাই। সুনির্দিষ্ট ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে মামলার প্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেপ্তার সহ শাস্তি মূলক ব্যবস্থার সাথে সাথে সাজ্জাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমাদের বনভূমি রক্ষার জন্য এই ধরনের যারা নিবেদিত কর্মী ও নিবেদিত প্রাণ আছে তারা আমার সহকর্মী। আপনারা সকলেই জানেন বিগত কয়েক মাসে শুধু উখিয়া রেঞ্জাই এই বনভূমি এবং বন রক্ষা করার জন্য আমাদের রেঞ্জ অফিসার এবং ডেট অফিসার যারা আছে তারা কি পরিমাণ ইফোর্ট দিয়েছে। সেটা আমরা ঢাকা থেকে বসে চিন্তাও করতে পারবোনা। রাত নেই দিন নেই তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তার প্রেক্ষিতেই সুনির্দিষ্ট ভাবে সাজ্জাদকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং এই যে মামলা হয়েছে সেই মামলার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট বিচার হবে সেই আশাবাদ আমরা অবশ্যই রাখতে পারি। ভবিষ্যতে যে সকল জায়গায় বন রক্ষা এবং বনভূমি রক্ষায় আমাদের ঝুঁকি আছে সে সকল জায়গায় আমাদের কর্মীদের কিভাবে সুরক্ষিত করা যায় সেই দাবি আজকে আমরা পেয়েছি। এই ডাবের প্রেক্ষিতে আমরা সুনির্দিষ্ট ভাবে রেঞ্জ এবং বিট গুলাতে রক্ষিত করার জন্য আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে প্রস্তাব সে প্রস্তাব আমরা পেশ করব।

পাঁচ দফা দাবিসমূহ হলো:

সাজাদুজ্জামানকে নির্মম হত্যকান্ডের সাথে জড়িতদের অতিসত্বর গ্রেফতার করে আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা

প্রয়াত মোঃ ইউসুফ ও সাজাদুজ্জামানের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা

আহত বন কর্মকর্তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা

বনভূমি সুরক্ষায় ভূমিদস্যুদের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকা কর্মীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরীতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া ও

দেশের বনভূমি, পাহাড় ও নদী রক্ষায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোল ন(বাপা)সহ বাংলাদেশ ফরেসস্টা’র অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ), পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস, চট্টগ্রাম ফরেস্ট্রী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ, এছাড়াও পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠনসমূহ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *