সারাদেশ

যশোরে নিখোঁজের একদিন পর ডোবা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ডেস্ক রিপোর্ট: পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বন খেকো ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেয় না। সরকার যদি প্রথম থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করত তাহলে আজকে বন কর্মকর্তাদের এমন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হত না। এভাবে জীবন হারাতে হতো না।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁও বন অধিদফতরের সামনে বন কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের দায়িত্ব পালনের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা অনেকদিন যাবৎ পাহাড় এবং বন রক্ষায় সরকারের উদাসীনতার ব্যাপারে কথা বলছি। যে জেলাটি হতে পারতো বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জেলা, সবচেয়ে সুন্দর বিভাগ সেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভূমিদস্য এবং পাহাড় খেকোদের অত্যাচারে একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেটা হতে পারতো জাতীয় ঐক্য সেটা এখন অনেক দূষিত নগরীর অন্যতম হয়ে গেছে। এই পাহাড় এবং বন রক্ষাকে সরকারের সংবিধান হিসেবে ঘোষণা করেছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পাহাড় রক্ষা করতে গিয়ে কর্মনিষ্ঠক বন কর্মকর্তা হত্যার শিকার হলেন। তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা কি জবাব দেব? তার স্ত্রী এবং সন্তানকে পিতা এবং স্বামী হারানোর অসহায় মৃত্যু কেন মেনে নিতে হবে? সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র কোথায়? এখানে এসে জানতে পারলাম এর আগে যে বন কর্মকর্তা মারা গিয়েছিলেন ২০২০ সালে তাকে যারা হত্যা করেছিলেন তারা জামিন পেয়ে গেছেন। সেই আসামিরা কীভাবে জামিন পেয়ে যায়? সরকার কী করে? সরকারি কোন আইনজীবী দাঁড়িয়েছিল সেই আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করতে? আসামিদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হোক। সাজ্জাদের হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদেরকেও গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করা হোক।

তিনি আরও বলেন, এই যে অসহায় মৃত্যু তাকে যদি আমরা অসহায় মৃত্যু হিসেবেই মেনে নেই তাহলে আমাদের জবাবদিহিতার আর কোনো জায়গা থাকে না। তার পরিবার যেন সম্মানজনক জীবন চালাতে পারে সেই নিশ্চয়তা আমাদেরকে দিতে হবে। তবেই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটা থাকবে। বন কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দেওয়া হয় না, সুরক্ষা দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। বন কর্মকর্তারাও তো আইনি রক্ষা করে। তারাও তো বন আইন রক্ষা করতেই পাহাড়ে যায়। তাহলে তাদেরকে কেন সুরক্ষা দেওয়া হবে না? কেন ঝুঁকি ভাতা দেয়া হবে না? তারাও তো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। সরকার বহুগুণ ঝুঁকি বাড়িয়ে ফেলছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের শাস্তি চাই। একই সাথে সব পাহাড় খেকো এবং ভূমিদস্যুদেরও শাস্তি চাই। তাদের তালিকা আপনার আমার কাছে নাও থাকতে পারে, সরকারের কাছে সম্পূর্ণ তালিকা আছে।

এসময় মানববন্ধনে অংশ নেওয়া পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর এক দাবিনামা পেশ করা হয়।

দাবিসমূহ হলো:

সাজ্জাদুজ্জামানকে নির্মম হত্যকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অতিসত্ত্বর গ্রেফতার করে আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

প্রয়াত মোঃ ইউসুফ ও সাজাদুজ্জামানের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

আহত বন কর্মকর্তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

বনভূমি সুরক্ষায় ভূমিদস্যুদের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকা কর্মীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া ও

দেশের বনভূমি, পাহাড় ও নদী রক্ষায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমাদের সহকর্মী সাজ্জাদুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে সেই হত্যার বিচার অবশ্যই আমি চাই। সুনির্দিষ্ট ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে মামলার প্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেফতারসহ শাস্তি মূলক ব্যবস্থার সাথে সাথে সাজ্জাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমাদের বনভূমি রক্ষার জন্য এই ধরনের যারা নিবেদিত কর্মী ও নিবেদিত প্রাণ আছে তারা আমার সহকর্মী। আপনারা সবাই জানেন বিগত কয়েক মাসে শুধু উখিয়া রেঞ্জই এই বনভূমি এবং বন রক্ষা করার জন্য আমাদের রেঞ্জ অফিসার এবং ডেট অফিসার যারা আছে তারা কি পরিমাণ এফর্ট দিয়েছেন। সেটা আমরা ঢাকা থেকে বসে চিন্তাও করতে পারব না। রাত নেই দিন নেই তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তারা। তারই প্রেক্ষিতে সাজ্জাদকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং এই যে মামলা হয়েছে সেই মামলার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট বিচার হবে সেই আশাবাদ আমরা অবশ্যই রাখতে পারি। ভবিষ্যতে যে সব জায়গায় বন রক্ষা এবং বনভূমি রক্ষায় আমাদের ঝুঁকি আছে সে সব জায়গায় আমাদের কর্মীদের কীভাবে সুরক্ষিত করা যায় সেই দাবি আজকে আমরা পেয়েছি। এই দাবির প্রেক্ষিতে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে রেঞ্জ এবং বিট গুলোতে রক্ষিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে প্রস্তাব সে প্রস্তাব আমরা পেশ করব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা)সহ, বাংলাদেশ ফরেসস্টা’র অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ), পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস, চট্টগ্রাম ফরেস্ট্রী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ, এছাড়াও পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠনসমূহ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *